Thursday, July 25, 2024
Homeঅর্থনীতিকর ফাঁকিতে দেশের ক্ষতি ১,২৩৫ কোটি টাকা

কর ফাঁকিতে দেশের ক্ষতি ১,২৩৫ কোটি টাকা

কর ফাঁকিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যক্তি করদাতারাও বিপুল পরিমাণে কর ফাঁকি দিচ্ছেন।

সারা বিশ্বেই ধনী ব্যক্তি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কর ফাঁকি দেয়। যেসব দেশে করহার বেশি, কোম্পানি ও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সেই সব দেশে কর না দিয়ে এমন জায়গায় মুনাফার অর্থ পাঠিয়ে দেন, যেখানে করহার কম। অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা প্রতিবছর তার ফিরিস্তি প্রকাশ করেন। বৈশ্বিক কর ন্যায্যতাবাদীরা এ নিয়ে প্রতিবছরই প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন।

সম্প্রতি ২০২১ সালের কর ফাঁকির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিস ও পাবলিক সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রতিবেদনে জানা গেছে, কর ফাঁকির কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের ক্ষতি হয় প্রায় ১৪ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। তবে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির নিরিখে এই অঙ্ক বেশি নয়—শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এই অর্থ দিয়ে দেশের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব।

আরও বলা হয়েছে, কর ফাঁকিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এরা ট্রান্সফার প্রাইসিংসহ বিভিন্ন কায়দায় বিপুল অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়ে থাকে। তাতে বাংলাদেশের মোট কর ফাঁকির ৮২ শতাংশের জন্য দায়ী হচ্ছে এই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। বাকি ১৮ শতাংশ ফাঁকি দিচ্ছেন ধনী ব্যক্তিরা, যাঁরা নানা অফশোর কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে থাকেন।

গত বছরও এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। সেবার জানানো হয়, কর ফাঁকির কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এবারের ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কম—১৪ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার।

বিশ্লেষকেরা বলেন, কর ফাঁকির কারণে বিভিন্ন দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা এড়ানো গেলে সাধারণ মানুষের উপকারই হতো। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি খুবই গুরুতর, কারণ, তারা এমনিতেই অর্থসংকটে ভোগে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো খাতে তারা প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারে না। অথচ ধনী মানুষ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর অবলীলায় কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে।

এই বাস্তবতায় তিনটি নীতিগত সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রথমত, দেশে দেশে মহামারির কারণে অর্জিত অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর বসানো উচিত। আমাজনের কথাই ধরা যাক। করোনা বিধিনিষেধের কারণে অনেক দেশেই অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তারা নিজেদের দানবীয় সাংগঠনিক শক্তির বদৌলতে বিপুল মুনাফা করে। এই অতিরিক্ত মুনাফার বড় অংশ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ সরকারের নিয়ে নেওয়া উচিত। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই মুনাফা সামাজিকভাবে ক্ষতিকর। এই অর্থ দিয়ে মানুষকে সরাসরি নগদ সহায়তাও দেওয়া যেত, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য যা খুবই জরুরি।

দ্বিতীয়ত, সরকারের উচিত সম্পদ করারোপ করা। আয়কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর অবকাশ আছে, অর্থাৎ তাকে আরও অনুক্রমিক করা, যেখানে ধনীরা ক্রমবর্ধমান হারে কর দেবেন। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে দেশে ধনীদের করহার কম। উন্নয়নশীল দেশে প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের হিস্যা বেশি। সে জন্য সম্পদ করারোপ করা হলে ধনীদের সরাসরি করের আওতায় নিয়ে আসা যায়।

তৃতীয়ত, জাতীয় ব্যবস্থার সঙ্গে বৈশ্বিক তৎপরতার সংযোগ ঘটাতে হবে। আন্তর্জাতিক কর আইন করে থাকে ওইসিডিভুক্ত ধনী দেশগুলো। তবে সেই দায়িত্ব জাতিসংঘের কাঁধে অর্পণ করার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, নিজেরাই আইন করে ধনী দেশগুলো নিজেরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই কর ফাঁকির ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশের উৎস হচ্ছে এই ওইসিডিভুক্ত দেশগুলো। খুব সীমিত কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এর জন্য দায়ী।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular