রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো।
এ সময় ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করে পুতিন বলেন, ‘পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, রাশিয়ার জনগণ তার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাবে।’
ক্রেমলিন জানিয়েছে, জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের ফোনকলে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান পুতিন। পরে ডিক্রিতে সই করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি ভাষণ দেন। বিবিসি, সিএনএনসহ একাধিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ ভাষণে পুতিন ওই অঞ্চলের ইতিহাস তুলে ধরেন। অটোমান সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপে সম্প্রসারণ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়েও কথা বলেন তিনি।
পুতিন বলেন, ‘আমি মনে করি একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। যে সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তা হলো অবিলম্বে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক-এর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়া।’
ইউক্রেনের বিচ্ছিন দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক। এই অঞ্চলগুলো রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীদের আবাসস্থল। তারা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
টেলিভিশনে দেওয়া দীর্ঘ ভাষণে ইউক্রেন সম্পর্কে পুতিন বলেন, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোনি যেটা পুতুল সরকারের মাধ্যমে চলছে। তিনি বলেন, ইউক্রেন কোনদিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না এবং আধুনিক ইউক্রেন রাশিয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।
ইউক্রেনকে ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ধারণাকে রীতিমত আক্রমণ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা সরাসরি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তার যুক্তি, ন্যাটো রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টা আমলে নেয়নি।
পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনকে বিদ্রোহীদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করা বন্ধ করতে হবে, না হলে এর পরিণতি মোকাবেলা করতে হবে। এর কিছু পরেই বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি দুটি ডিক্রিতে সই করেন। সেখানে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী সেখানে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবে।
তবে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকার অর্থ আসলে কী- সেটি নির্দিষ্ট করে বলেনি রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের বিদ্রোহী এলাকাতে রুশ সৈন্য পাঠাতে পারবে।
বিবিসির মস্কোর সংবাদদাতা স্টিভ রোসেনবার্গ বলছেন, অনেক বছর আগে যখন রাশিয়া প্রথম পূর্ব ইউক্রেনে সৈন্য সমাবেশ ঘটায় তখন মস্কোই মূলত এই বিদ্রোহী অঞ্চল সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তাদের স্বাধীনতার ব্যাপারে ভ্লাদিমির পুতিনের এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ইতিহাস বদলে দেওয়া একটি মুহূর্ত।
প্রথমত, এটা মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়া শান্তি প্রক্রিয়াকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় পুতিন নিজেও অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। একই সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনে একটা বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। আর এই ডিক্রিতে সই করার অর্থ হলো- এটা পরিষ্কার যে ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে ওইসব বিদ্রোহী এলাকায় সৈন্য পাঠাচ্ছে।