Saturday, July 27, 2024
Homeফিচারজলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে কৃষিকে রক্ষায় গুরুত্বারোপ

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে কৃষিকে রক্ষায় গুরুত্বারোপ

পর্দা নামল ৪ দিনব্যাপী জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের (এপিআরসি) ৩৬তম আসরের। এবারের সম্মেলনে ডিজিটাল হাব স্থাপন, গবেষণার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠন, সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল কৃষি, টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে বিবেচনা করে ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচকে অগ্রাধিকার দিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেছে এপিআরসির সদস্য ৪৬টি দেশ।

বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই সম্মেলনের শেষদিন গতকাল ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। এ সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম ও খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ পরবর্তী দুই বছরের জন্য এপিআরসির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। পরবর্তী ৩৭তম এপিআরসি সম্মেলন শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমরা যে রকমটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। মানবজীবনের সবকিছুকেই এটি প্রভাবিত করবে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি। আর কোভিডের প্রভাবে এ অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। সারের উৎপাদন কমে গেছে। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মালদ্বীপ তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

মন্ত্রী জানান, এ অবস্থায় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও কোভিড মোকাবিলা করে টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গবেষণার মাধ্যমে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণে একসঙ্গে কাজ করার কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে। এখানে এফএও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কৃষিতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য একটি ‘বিশেষ ফান্ড’ গঠনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে এটিকে চূড়ান্ত রিপোর্টের মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলে কৃষিমন্ত্রী জানান।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ সম্মেলনে ডিজিটাইজড কৃষি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এফএওকে একটি ‘ডিজিটাল হাব’ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল, সব দেশ এটি গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল হাবে ৪৬টি দেশের কৃষিপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী তথ্যসমৃদ্ধ থাকবে, যাতে সব দেশ উপকৃত হতে পারে। জাপানের উদাহরণ তুলে মন্ত্রী বলেন, জাপান কৃষিতে ড্রোন, রোবট ব্যবহার বা প্রিসিশন কৃষি করছে। মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষায় ‘ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ করা হয়েছে। ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়। জুনোটিক বা প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে।

ভালো পরিবেশেই শুধু ভালো জীবনযাপন করা সম্ভব উল্লেখ করে ড. আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, এশিয়া প্যাসিফিকে যে খাদ্য যতটা পাওয়া যাচ্ছে সেটা যেন নিরাপদ এবং পুষ্টিকর হয়- সেটা নিশ্চিত করতে সব দেশ একমত রয়েছে। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সম্মেলন আয়োজনের জন্য সদস্য দেশসমূহ বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তারা বাংলাদেশের সক্ষমতা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছে।

এদিকে গতকাল সকালে সম্মেলনের সেশন শুরুর আগে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে ফিলিপাইনের কৃষিমন্ত্রী উইলিয়াম ডি. ডার, শ্রীলংকার কৃষিমন্ত্রী মিথালাওয়ে মাহিনদানার আলুথগামেজ ও লাওসের কৃষি উপমন্ত্রী থংপাথ ভংমানির সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে উন্নতমানের রপ্তানিযোগ্য আনারসের জাত এমডি-২, জি-নাইন কলা, ডেলমন চা এবং মাকাপুনো নারিকেল উৎপাদনে সহযোগিতা করবে ফিলিপাইন। এ বিষয়ে শিগগিরই বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে। বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন শ্রীলংকার কৃষিমন্ত্রী।

এ ছাড়া শ্রীলংকার নারিকেল গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দেন ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। আপদকালীন চাল সংকট মোকাবিলায় লাওস থেকে আমদানি করার আগ্রহের কথা জানালে সহযোগিতার আশ্বাস দেন থংপাথ ভংমানি। কৃষি খাতে পারস্পরিক সহায়তা বাড়াতে শিগগিরই সমঝোতা স্মারক সই করার বিষয়েও সম্মত হয় দুই দেশ।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular