Saturday, July 27, 2024
Homeফিচাররুশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেনের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস

রুশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেনের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস

শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পশ্চিম ইউক্রেনে অবস্থিত দেশটির অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করেছে রাশিয়া। বিবিসি জানায়, গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় সকালে পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানো-ফ্র্যাংকিভিস্ক অঞ্চলে ওই অস্ত্রগুদামে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেংকভ বলছেন, ইভানো-ফ্র্যাংকিভিস্ক অঞ্চলে মাটির নিচে তৈরি ওই অস্ত্রভাণ্ডারে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান থেকে নিক্ষেপের নানা গোলাবারুদ রাখা ছিল। আমাদের কিনজহাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ওই অস্ত্রগুদাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। তবে এই দাবির সত্যতা কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ইউক্রেনে গত ২৪ দিনের লড়াইয়ে রাশিয়া এই প্রথম হামলায় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল।

বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, রাশিয়ার কিনজহাল ক্ষেপণাস্ত্রটি বায়ুমণ্ডলের উচ্চতম স্তর দিয়ে শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুতগতিতে চলে। এটি দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। কোনো বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে একে ঠেকানো যায় না। গত বছর রাশিয়া জানিয়েছিল, দেশটির উত্তর-পশ্চিমের হোয়াইট সি সাগরের একটি ফ্রিগেট থেকে তারা কিনজহাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্তত আরও পাঁচটি দেশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।

এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য শহরে রুশ হামলা অব্যাহত আছে। বিবিসির খবর বলছে, রুশ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে অনেক ভাড়াটে সেনা কিয়েভে ঢুকেছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, গত ২৪ দিনে তারা কিয়েভ থেকে রাশিয়ার হয়ে কাজ করা ১২৭ নাশকতাকারীকে আটক করেছে। এর মধ্যে ১৪টি অনুপ্রবেশকারী গোষ্ঠীর সদস্যরা রয়েছে। বন্দরনগরী মারিওপোলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে। শহরের একটি থিয়েটারে গত বুধবার রকেট হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। রাস্তায় লড়াই চলতে থাকায় পুরোদমে উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো। এ ছাড়া ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরটিতে রুশ সেনারা মানবিক সাহায্য ঢুকতে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে মারিওপোলে রুশ সেনাদের এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য বলে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আগের দিন শুক্রবার কৃষ্ণসাগর উপকূলীয় শহর মাইকোলেভে ইউক্রেনের একটি সেনা ব্যারাকে পরপর তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, হামলার সময় ওই ব্যারাকে কমপক্ষে ২শ সেনা ছিল। সিএনএন জানিয়েছে, সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, মাইকোলেভে ইউক্রেনের অনেক সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রুশ বাহিনী আজভ সাগরে সাময়িকভাবে ইউক্রেনের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে দোনেৎস্ক অঞ্চলে আংশিক সফলতা পেয়েছে। তীব্র হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনের আরেক দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়াতে জারি করা হয়েছে ৩৮ ঘণ্টার কারফিউ। মারিওপোল রাশিয়ার সেনারা অবরুদ্ধ করলে জাপোরিঝিয়া শহরটি ইউক্রেনীয়দের পালানোর বড় বিকল্প পথ হয়ে ওঠে।

এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা চললেও উল্লেখযোগ্য কোনো সমাধান আসেনি। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আলোচনা করে এখনই সংকট সমাধানের সময়। আর আলোচনায় না এলে রাশিয়াকে পস্তাতে হবে। আলোচনায় কাজ না হলে রাশিয়া এমন ক্ষতির মুখে পড়বে যে কয়েক প্রজন্মের চেষ্টায়ও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। জেলেনস্কি এমন এক সময়ে এই হুশিয়ারি দিলেন, যখন ঠিক তার আগের দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন মস্কোয় ঘটা করে আট বছর আগে ক্রিমিয়া দখলের বার্ষিকী উদযাপন করেছেন। সেখানে পুতিন দম্ভভরে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে তার দেশই জিতবে।

তবে গতকাল রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে কিয়েভ যেন রাশিয়ার দাবি মেনে না নেয়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাধ্য করছে। তবে এ দাবির সপক্ষে ল্যাভরভ কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। ঠিক তার আগের দিন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে ফোনে আলাপকালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী দনবাস অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের পাল্টাপাল্টি হুমকি

ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালানোর পর এশিয়ার পরাশক্তি চীন কী ভূমিকা নেবে- সেটি নিয়ে পশ্চিমা মহলে আলোচনার অন্ত নেই। রাশিয়াকে অনুসরণ করে চীন পার্শ্ববর্তী দেশ তাইওয়ান দখল করে নেয় কিনা, সে আশঙ্কাও আছে। গত শুক্রবার ইউক্রেন সংকটসহ নানা ইস্যু নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভিডিওকলে কথা বলেন। এ সময় চীন স্পষ্ট করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ব্যক্তি তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক বার্তা দিয়ে আসছে। তাইওয়ান ইস্যুটি যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা না যায়, তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে বিধ্বংসী প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে চীনকে হুশিয়ারি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে বেইজিং বস্তুগত কোনো সহায়তা দিলে তার পরিণতি হবে ভয়ানক। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনীয় শহর এবং বেসামরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা চালানো রাশিয়াকে কোনো বস্তুগত সহায়তা যদি চীন দেয়, তা হলে পরিণতি এবং তা প্রয়োগ কেমন হবে তার বর্ণনা করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সংকটের কূটনৈতিক সমাধানে নিজের সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular