মুরাদ হোসেন লিটন : গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত দ্বিতীয় দিনের মতো গণশুনানি গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে এদিন সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং পশ্চিামঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের এ ঊর্ধ্বগতির বাজারে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। তারা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির গণশুনানিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দাবি করে এটি বাতিলের দাবি জানান।
গতকাল শুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল, সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও মোহাম্মদ আবু ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহত্তর গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল শুনানির শুরুতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, সবার আগে জনগণ, তাদের ছাড়া আমারও অস্তিত্ব থাকে না। দাম ববৃদ্ধির পর সামাজিক কী প্রভাব পড়বে সেটি দাম বৃদ্ধির আবেদনের সঙ্গে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু কোম্পানিগুলো সে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। কোম্পানিগুলোর শুধু নিজেদের লাভ বা মুনাফার কথা চিন্তা না করে দাম বাড়ালে মানুষের জীবনে কি প্রভাব পড়বে সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার।
এর আগে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে আবাসিকসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তারা গ্রাহকদের দুই চুলার গ্যাসের দাম ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার গ্যাসের দাম ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা করার সুপারিশ করে। যদিও কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত দাম ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ১০০ এবং ২ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা, ক্যাপটিভে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা, সারে ৪ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা, চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা বাড়িয়ে ১২.৬৫, বাণিজ্যে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৬০ পয়সা, সিএনজিতে ৪৩ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা করার সুপারিশ করে কমিটি। মিটারযুক্ত চুলার ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করার সুপারিশ করা হয়।
এদিকে শুনানিতে অংশ নিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলো অনেক মুনাফা করছে। সরকারকে উদ্বৃত্ত টাকা দিচ্ছে। উন্নয়ন কাজের জন্য গ্রাহকের পকেট থেকে এখনই গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের নামে টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। তারা ব্যবসার নামে গ্রাহকের টাকা দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছে। কোম্পানিগুলো যেখানে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দিতে পারছে না, সেখানে তারা ডিমান্ড চার্জ বাড়াতে চাইছে, যা অবাস্তব।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান বলেন, বছর বছর গ্যাসের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ে। সরকারের উচিত প্রতি পাঁচ বছর পর পর গ্যাসের দাম সমন্বয় করা। যাতে ব্যবসায়ীরা সে অনুযায়ী ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারে। আজ যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আশা করছি কমিশন সাধারণ মানুষের বিষয়টি আমলে নিয়ে ও কোম্পানির মুনাফা বিবেচনা করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে।
সাধারণ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন বলেন, কারিগরি কমিটির গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমরা মানি না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ভাড়াও অনিয়ন্ত্রিত। এমন অবস্থায় গ্যাসের দাম নিয়ে গণশুনানি করা উচিত হয়নি। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষ চরম বিপদে পড়বে। এ পরিস্থিতি চিন্তা করে কমিশনের উচিত আপাতত এ শুনানি স্থগিত রাখা।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এ প্রস্তাব বাতিল করা উচিত। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো।