ভোট ঘিরে জোটের হিসাব ১৪ দলে

0
83

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় ২০ মাস বাকি। এর মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী হয়েছে। আওয়ামী লীগও নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছানোর কাজ পুরোদমে শুরু করেছে। রমজান মাসেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বর্ধিতসভা, কর্মিসভা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। নির্বাচন ঘিরে প্রত্যাশাপ্রাপ্তির হিসাব কষছেন ১৪ দলের শরিকরা। তাদের ভাষ্য- বিগত নির্বাচনে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। দলীয় দাবি-দাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই শরিকরা আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে যাবে।

সম্প্রতি একটি দল চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ১৪-দলীয় জোটে বর্তমানে ১২টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে চারটি দলের নেতারা জোটের শুরু থেকে আজ অবধি সংসদে বা মন্ত্রিসভায় যেতে পারেননি। এ তালিকায় রয়েছে গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-বিএসডি)। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও সাম্যবাদী দল এবার ঠাঁই না পেলেও গত দুটি সরকারে মন্ত্রিসভায় ছিল। কিন্তু বাকি কোনো দলই তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভায় ডাক পড়েনি। এমনকি তাদের অনেককে নির্বাচনে জোট থেকে মনোনয়নও দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করার পর জোটে টানাপড়েন শুরু হয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত আছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বলছেন, আদর্শিক এ জোটের দুয়ার স্বাধীনতার পক্ষের সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে জোটে এলেই নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে ব্যাপারটি এমন নয়। এ জন্য দলীয় অবস্থান ও দলের নেতা হিসেবে ব্যক্তিগত ইমেজও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আবেগের চেয়ে বাস্তবতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জোটের সবাইকে সারাদেশে দলীয় কার্যক্রম বাড়িয়ে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন।

এদিকে জোটের শরিকদের অনেকে মনে করেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা মনোনয়ন পাননি। তাই এবার দরকষাকষি করেই নির্বাচনে যাবেন তারা। বাসদ বিএসডি সভাপতি রেজাউর রশীদ খান আমাদের সময়কে বলেন, বাসদ অনেক আগেই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো, অনেকের চেয়ে আমাদের অবস্থান ভালো হলেও আমাদের দল থেকে কেউ মনোনয়ন পায়নি। এ পরিস্থিতিতেও আমাদের বক্তব্য হলো- আমরা ১৪ দলে আদর্শিক কারণে জোটবদ্ধ হয়েছিলাম এবং থাকব। তবে শরিক দল হিসেবে আমাদের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা তো আছেই।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, প্রত্যাশাপ্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হবে, তবে তা আরও পরে। আমরা আমাদের জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ভাইয়ের বাসায় নিজেরা বসব, রমজানের পর। গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অনেক পুরনো। স্বাধীনতাযুদ্ধেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অংশ নিয়েছি। তখন ন্যাপ ও গণতন্ত্রী পার্টি মিলে এক দল ছিল। এর পর আলাদা দল হলেও এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি।

বলা যায়, গণতন্ত্রী পার্টি আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধু। তিনি বলেন, গণতন্ত্রী পার্টি ১৪ দলে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত কেবল রুবী রহমান (২০১৪ সালে) সংরক্ষিত আসনে এমপি হয়েছিলেন। আর কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বলেছেন, তিনি শরিকদের মূল্যায়ন করবেন। আমরা সেই আশায় আছি। তিনি আরও বলেন, না পাওয়ার দুঃখ-বেদনা থাকেই। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দেরও আছে।

জোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা রাজনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছি। দাবি-দাওয়া বলতে যা বোঝায় তা নিয়ে এখনো কথা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা থাকে। আমাদেরও আছে। তিনি জানান, তাদের দল থেকে এ পর্যন্ত দুজন মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি মনে করেন, সব দলের মূল্যায়িত হওয়া উচিত।

ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে হয়তো তফসিল ঘোষণার পর আলোচনা হবে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে মনোনয়নের ক্ষেত্রে শরিকদের যত কম রাখা যায়। যদি শরিকরা সুবিচার পায় তা হলে আদর্শিক জোটটির আন্তরিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। তা না হলে জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দেবে। সর্বোপরি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি জানান, ২০১৪ সালে তাদের দলের আমিনা আহমেদকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হয়েছিল।

অন্যান্য দল যেমন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দলের নেতৃবৃন্দ মনে করেন ১৪ দল যে চেতনায় শুরু হয়েছিল, সেভাবেই চলা উচিত। সে ক্ষেত্রে শরিকরা মূল্যায়িত হলে জোটের কার্যক্রমে গতি বাড়ে। তবে দাবি-দাওয়া নিয়ে এখনই কথা বলতে নারাজ এই তিনটি দলের নেতারা। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বলেন, এই জোটের অনিবার্যতা এখনো কমে যায়নি। চলমান রাজনীতির প্রয়োজনেই ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার।

জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। দলটির সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া আমাদের সময়কে বলেন, আমরা জোট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে জোটের সভায় যাওয়া থেকে বিরত রয়েছি। তিনি জানান, নতুন কিছু করার কথা তারা ভাবছেন। শিগগিরই এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে। জোট ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো কোনো নির্বাচনে যাব না। ফ্যাসিজম থেকে দূরে থাকতে চাই। আমরা মনে করেছি, যে আদর্শ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, বর্তমানে জোট সেখানে নেই।

১৪-দলীয় রেজাটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ দল আছে এবং থাকবে। আশা করছি আগামী নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here