Home অর্থনীতি ভোজ্যতেলের বাজারে আবার উত্তাপ বাড়ছে

ভোজ্যতেলের বাজারে আবার উত্তাপ বাড়ছে

0

মুরাদ হোসেন লিটন : সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টায় দাম কিছুটা কমলেও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার খবরে বাজারে খোলা সয়াবিন ও পামতেলের দাম আবার অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই রাজধানীর কোথাও-কোথাও খুচরা পর্যায়ে কেজিতে খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়ায় খুচরাতেও দাম বেড়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি জায়গায় গেল সপ্তাহের দামে তেল বিক্রি হলেও অনেক দোকানে খোলা তেলের দাম বেড়েছে। একেক দোকানে একেক হারে বেড়েছে দাম। মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. শাহজাহান জানান, গত শুক্রবারেও খোলা

সয়াবিনের কেজি ১৬৪-১৬৫ টাকা বিক্রি করা গেলেও এখন ১৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ১৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পামতেল এখন ১৭৫ টাকা হয়েছে। কোথাও-কোথাও এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মূলত পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে।

কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারের সোলেমান স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. ফয়েজ জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তবে তার বেশি দামে কিনতে হয়েছে তেল। তাই খোলা তেলের কেজি ১৮৫ টাকা এবং পামতেল ১৬৫-১৬৬ টাকায় বিক্রি করছেন। তার দাবি গত শুক্রবারে খোলা সয়াবিন ১৮০ টাকা এবং পামতেল ১৬৪ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছে।

কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একেক ব্যবসায়ী একেক দামে খোলা তেল বিক্রি করছেন। কিচেন মার্কেটের ঢাকা জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মো. মুজাহিদ জানান, এ বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা তেলের দাম বেড়েছে। খোলা তেলের কেজি এখন ১৮০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে বোতল তেলেরও সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কাছ থেকে বোতলে লেখা এমআরপি দরে তেল বিক্রি করছেন। শুধু তা-ই নয়, এর সঙ্গে সরিষার তেলসহ কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য কিনতেও বাধ্য করছেন। এতে বোতল তেলের দামও বেড়ে গেছে। ডিলারের কাছ থেকে বাড়তি দামে কিনতে হয় বিধায় অনেক খুচরা ব্যবসায়ী দোকানে বোতল তেল রাখছেন না।

রাজধানীর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পামঅয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। কারণ ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পামঅয়েল উৎপাদনকারী দেশ। এতে পামঅয়েলের পাশাপাশি অন্য ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাবে।

জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় কেবিনেট মিটিংয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, বাসাবাড়িতে রান্নার তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে তেলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এটি কার্যকর হবে।

ইন্দোনেশিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার থেকে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেশের বাজারে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বেড়ে গেছে।

খোলা তেলের বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, এমনিতেই বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম অনেক বাড়তি রয়েছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার নিষেজ্ঞার কারণে বাজার আরও চড়া হবে। সারাবিশ্বে পামঅয়েলের বড় জোগানদার ইন্দোনেশিয়া। দেশটি পামঅয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় শুধু বাংলাদেশ না সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে আমদানি করা তেলের খরচ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক। তবে আমাদের হাতে দামের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল থেকে কিনে অল্প লাভে বিক্রি করি। আমাদের বেশি দামে কিনতে হলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।

ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সয়াবিনের দামে প্রভাব ফেললেও এই মুহূর্তে তেলের দাম বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তানসহ সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আমরা সরকারের সঙ্গে বসব। আপাতত ঈদের আগে তেলের দাম বাড়াচ্ছি না।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here