Thursday, July 25, 2024
Homeফিচারতেঁতুলতলা মাঠ শিশুদের

তেঁতুলতলা মাঠ শিশুদের

শহুরে শিশুদের খেলাধুলার খোলা জায়গা কমছে দিন দিন। ইটপাথর আর আকাশচুম্বী অট্টালিকা দখল করেছে খেলার মাঠ। রুটিনে বাঁধা জীবন আর মোবাইল ফোনের বিনোদনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মাঠের খবর সেই অর্থে কেউ রাখেনি। তবে ব্যতিক্রম ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলার বাসিন্দারা। শতবর্ষী খেলার মাঠে তারা থানার ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। প্রতিবাদ করে পুলিশের তোপের মুখে পড়েছে। থানাহাজতে গিয়েছে।

তবুও হাল ছাড়েনি। তাদের সমর্থনে যুক্ত হয়েছে সারাদেশের মানুষ। অবশেষে গতকাল তেঁতুলতলার খেলার মাঠে থানা নির্মাণ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। থানার ভবন না করে মাঠটি শিশুদের খেলাধুলার জন্যই রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত কয়েক দিনের টানাপড়েন আর নানামুখী আলোচনার মধ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ওই এলাকায় খেলার কোনো মাঠ নেই, শিশুদের খেলা বা বিনোদনের কোনো জায়গায় নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, এটা পুলিশের জায়গা, পুলিশের থাক। তবে আর যেন কোনো কনস্ট্রাকশন কাজ না হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের জায়গাটা পুলিশের, সেটা পুলিশেরই থাকবে। তবে সেটা এত দিন যেভাবে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল, সেভাবে মাঠ হিসেবে ব্যবহার হবে। থানা ভবন কোথায় নির্মাণ হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটা পরে দেখা যাবে।

নানা প্রতিবাদের মুখেও মাঠের চারদিকে দেয়াল ও থানা ভবন নির্মাণের জন্য বালু রাখা ছিল। গতকাল বিকালে সেই বালু দিয়ে ঘর বানিয়ে খেলছিল শিশুরা। মাঠ ফিরে পাওয়ায় উচ্ছ্বাস তাদের মধ্যে। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গেও আনন্দে মেতে ছিল শিশুরা। তারা পুলিশের সঙ্গে করমর্দন করে। শিশুরা বলে, এখন আর কেউ মাঠে আসতে বাধা দেবে না। আমরা আনন্দে খেলতে পারব।

উচ্ছ্বাস অভিভাবকদের মধ্যেও। বিকালে মাঠে এসেছিলেন ৬০ বছর বয়সী মাসুমা কামাল। সঙ্গে ছিলেন তার স্বজনরা। মাসুমা কামাল বলেন, এই মাঠে খেলেই তারা বড় হয়েছেন। তার সন্তানরা মাঠে খেলাধুলা করেছেন। এখন নাতি-নাতনিরা খেলাধুলা করে। এই মাঠের সঙ্গে অনেক স্মৃতি আর আবেগ জড়িয়ে আছে। সেই মাঠ দখল হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না। মাঠ ফিরে পেয়ে তার বুকের ভেতরকার কষ্টটা নেমে গেছে।

রাজধানীর কলাবাগান আবাসিক এলাকায় তেঁতুলতলায় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত। এলাকার নানা সামাজিক অনুষ্ঠানও চলে আসছিল। স্থানীয়রা একে তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবেই চেনেন। মাঠটি পুলিশকে কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন বরাদ্দ দিলে তার প্রতিবাদে নামেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন উদীচীর কর্মী সৈয়দা রত্না। গত রবিবার মাঠে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হলে রত্না ও তার কিশোর ছেলে সেখানে গিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। এ সময় তাদের ধরে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর তীব্র ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে ১৩ ঘণ্টা পর মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে থানা থেকে ছাড়া হয় তাদের। তবে প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই নির্মাণকাজ চলতে থাকে। গত মঙ্গলবার মাঠ না ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।

মাঠ ফিরে পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সৈয়দা রত্না বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করা গেলে মাঠ ফিরে পাব। আমি প্রথম থেকেই জানি, এটি তার কানে গেলে তিনি মাঠটি শিশুদের জন্যই দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ায় এখন আর ভয় নেই। মাঠটিকে সদ্ব্যবহার করতে চাই শিশুদের জন্য। বাচ্চারা যেন সত্যিকারের সাংস্কৃতিক, উদার মনোভাব নিয়ে বড় হতে পারে। ওদের বিকাশ যেন সঠিকভাবে হয়। মাঠটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ আবার কোনো কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। মাঠটিকে আমরা চাই- একবারে সরকারি মাঠ হিসেবে, স্বতন্ত্র মাঠ হিসেবে ঘোষণা হোক। যেভাবে থাকলে- কেউ কখনো মাঠটিকে অন্য কোনো বিকল্প ভাববার চিন্তা করবেন না। এভাবে যেন হয়- আর কখনো এই মাঠে হামলা না হয়, এই নিরাপত্তাটুকু আমরা চাই।

এদিকে খেলার মাঠে থানা নির্মাণের বিরুদ্ধে গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। মাঠে বসেই আয়োজকরা খবর পান নির্মাণ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বসে মাঠের নকশা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, মাঠ উন্মুক্ত রাখার এ ঘোষণা এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার। রাতের আঁধারে মাঠে দেয়াল তৈরির সমালোচনা করে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সময়ের আগে ঠিকাদার যেভাবে তার কাজ শেষ করেছেন, তাতে বিনা টেন্ডারে কাজ পেতে পারেন।

মাঠের উন্নয়নে পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রতিটি এলাকায় এ রকম দুটি মাঠ দরকার। মাঠ থাকলে শিশুরা খেলতে পারবে। বৃদ্ধরা বসে কথা বলতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, মাঠ না থাকলে আমাদের সন্তানরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবে। এটা হতে দেওয়া যায় না।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular