আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা

0
42

বৈশ্বিক মহামারী করোনা থমকে দিয়েছিল সব কিছু। মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। উৎসব তো দূরের কথা দৈনন্দিন জীবনযাপনই কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় অনেক জীবিকা হারিয়ে নিদারুণ সংকটে পতিত হয়। করোনার ছোবল প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনের স্পন্দন থামিয়ে দেয়। মৃত্যু-আতঙ্কের এ বিভীষিকা বিশ্বের মানুষকে জীবন্মৃতে পরিণত করে। এ সময় কর্মক্ষম অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। মধ্যম ও স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। গত চারটি ঈদে অর্থনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কয়েক কোটি মানুষের জীবিকার উপলক্ষ নষ্ট হয়েছে। করোনার কারণে কৃষিপণ্যের বাজারজাত করার সমস্যার কারণে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ অভাবী হয়ে পড়েছেন।

করোনা সংক্রমণ কমে আসায় এখন কোনো বিধিনিষেধ নেই। সাধারণ মানুষ অবাধে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যস্ত। ব্যবসাবাণিজ্য, চাকরিবাকরিসহ সব কাজই চলছে স্বাভাবিক গতিতে। শ্রমিক শ্রেণিও তাদের আয়-রোজগারের সুযোগ পাচ্ছে। ফলে এবারই প্রথম একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে দেশবাসী।

মানুষ ঈদ করতে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছেন। ফলে ঢাকা শহরশূন্য হয়ে যাবে। দূরবর্তী বাসের টিকিটও অগ্রিম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু অনেক বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে বহু মানুষকেই লোকাল বাসে গ্রামে ফিরতে হবে। অন্যদিকে নদীপথে যারা স্বজনদের কাছে গ্রামে ফিরবেন, তারা ছুটছেন টিকিটের পেছনে। সৌভাগ্যবানরা সহজে টিকিট পাচ্ছেন। আবার কেউ-কেউ শতচেষ্টা করেও টিকিট পাচ্ছেন না। শুধু পরিবহনের টিকিট ম্যানেজ করতেও মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আবার বাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তার যানজট, ফেরি পারাপারে বিলম্ব ইত্যাদি ভোগান্তি তো সামনে রয়েছেই। প্রতিবছর ঈদে মানুষকে এসব ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। আবার আসার সময়ও একই চিত্র দেখা যায়। তবু নাড়ির টানে, স্বজনের কাছে ছুটে যায়। বলতে গেলে, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যায় ঢাকা।

ঈদের আগে গ্রামগুলো সরব হয়ে উঠবে মানুষের পদচারণায়। স্বজনবেষ্টিত মানুষ বলবে অনেক দিনের জমানো কথা। বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীর আড্ডায় মুখর হয়ে উঠবে সব হোটেল। স্বাধীনতার কালজয়ী সেই গানের মতো- আবার জমবে মেলা বটতলা হাটখোলা।

জমেছে ঈদের বাজার : ঈদকেন্দ্রিক রাজধানীর শপিং সেন্টারগুলো বেশ জমে উঠেছে। রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে এসব শপিং সেন্টার। শপিং সেন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, উচ্চবিত্তের লোকজনই সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করছেন। তবে মধ্যবিত্তরাও পিছিয়ে নেই। তারাও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এবার বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। কিন্তু এবার সেই সংকট নেই। মানুষের হাতে পয়সা আছে। তারা কেনাকাটা করছেন। আমাদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। রাত ২-৩টা পর্যন্তও দোকান খোলা থাকছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

অন্যদিকে ফুটপাতের দোকানগুলোয় বেশ বেচাবিক্রি হচ্ছে। নিম্ন ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষই মূলত ফুটপাতের এসব দোকানের খরিদদার।

জানতে চাইলে রিকশাচালক রবিউল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের আবার কীসের ঈদ। মামা, গরিবের জন্য ঈদ আসে না। আমার সংসারে ছয়জন মানুষ। সবাইকে ঠিকমতো খাইতে দিতে পারি না। রিকশা চালিয়ে নিজে খেয়ে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা বাড়ি পাঠাই। এটি দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলে। ঈদের বাড়তি কেনাকাটার সুযোগ কই। দ্রব্যের বাজারে আগুন! তিনি আরও বলেন, কষ্টের মধ্যে সন্তানদের জন্য ফুটপাতের দোকান থেকে জামা-কাপড় কিনব ভাবছি!

ঈদের আগে আগামী বৃহস্পতিবারই (২৮ এপ্রিল) সরকারি দপ্তর সংস্থার শেষ অফিস। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে ঈদের ছুটি শুরু হবে রবিবার থেকে। সরকারি অফিস খুলবে আগামী ৪ মে বুধবার। যদি একদিন সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করত, তা হলে সরকারি চাকরিজীবীরা টানা ৯ দিন ছুটি কাটাতে পারতেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৫ মে) অফিস খুলবে। ফলে যারা একদিনের ছুটি নিতে পারবেন না তাদের বৃহস্পতিবার অফিসে যোগদান করতে হবে। আর যারা অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একদিন অর্থাৎ ঈদের পরের বৃহস্পতিবার ছুটি নিতে পারেন, তারা টানা ৯ দিনই ঈদের আনন্দ উদযাপনের সুযোগ পাবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম বলেন, ৫ মে ছুটি নিলে টানা অনেক দিনের ছুটি হচ্ছে, ওভাবেই পড়েছে। কর্মচারীদের অপশনাল (ঐচ্ছিক) ছুটির একটা বিষয় আছে। যারা বৃহস্পতিবার ছুটি নেবেন, তারা ধারাবাহিকভাবে ছুটিটা ভোগ করতে পারবেন। যিনি ছুটি নেবেন না, তাকে তো ওই দিন অফিস করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ৫ মে ছুটি না নিয়ে অফিসে অনুপস্থিত থাকেন, তবে আগে-পেছনের সব ছুটি তার ছুটি থেকে কাটা যাবে।

সরকারি ক্যালেন্ডারে আগামী ২ থেকে ৪ মে তিন দিন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। তার আগে ১ মে শ্রমিক দিবস অর্থাৎ মে দিবসের ছুটি। এর আগে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবার মূলত ঈদের ছুটি শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। মাঝখানে ৫ মে বৃহস্পতিবার অফিস খোলা। এর পর ৬ ও ৭ মে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৫ মে ছুটি হলে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়ত দেশ। কিন্তু তা হচ্ছে না।

একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার ঈদের পর বৃহস্পতিবার ছুটি মিলবে না। তবু অফিসের প্রায় অর্ধেকের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই দিনের অপশনাল বা ঐচ্ছিক ছুটি নেবেন। প্রত্যেক শাখায় হয়তো দু-একজন সেদিন অফিসে আসবেন। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সেদিন অফিসে আসবেন না। অতীতে এমনটি দেখা গেছে। ফলে ধরতে গেলে, বেশিরভাগ সরকারি চাকুরেই টানা ৯ দিন ছুটি কাটাবেন।

ঈদের নামাজ ঈদগাঁয় : করোনাকালে গত দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের প্রধান জামাত বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকায় জাতীয় ঈদগা ময়দানেই হবে ঈদের নামাজ। এতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদদের সদস্য ও বিদেশি কূটনীতিকরা অংশ নেবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে। তবে ঈদের জামাত কয়টা হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here