রাষ্ট্রের জমি উদ্ধারে শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

0
48

চাঁদপুরের হাইমচরে নীলকমল ইউনিয়নের বাহিরচরে প্রায় ৪৯ একর খাসজমি দখলে নিয়ে ‘টিপুনগর’ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদের বিরুদ্ধে। ওই খাসজমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁদপুর সদরের সিনিয়র সহকারী জজ মো. মহিউদ্দিনের আদালতে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের পক্ষে মামলাটি করেন সরকারি কৌঁসুলি মো. আবদুর রহমান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন। ৩১ মে মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

মামলায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বড় ভাই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপুসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ১ নম্বর আসামি জাওয়াদুর রহিম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৫০ সালে নদীতে জেগে ওঠা জমি পরবর্তী সময়ে সরকারি স্বত্ব স্বার্থ বজায় রেখে কৃষকদের মধ্যে অস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ হাইমচর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে হাইমচরের ৪ নম্বর নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে ৪৮ দশমিক ৫২ একর জমি হাইমচর সাবরেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় ভুয়া দলিলমূলে মালিকানা নেন। পরে সেখানে

মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান গড়ে তোলেন। ওই এলাকার নাম বদলে নিজের নামে ‘টিপুনগর’ নামকরণ করেন তিনি।

বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খাসজমি উদ্ধারে আদালতে মামলা করল জেলা প্রশাসন। মামলায় ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৫ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মঈনউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তাতে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলায় জরিপবিহীন বাহেরচর (সোনাপুর তাজপুর) মৌজায় তফসিলভুক্ত দলিলে অনিয়মের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই চিঠির অনুলিপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বাহেরচর মৌজাটি জরিপ চলাকালীন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে চর জেগে উঠলেও আর জরিপ করা হয়নি। ফলে প্লটগুলোতে আর দাগ খতিয়ান পড়েনি। এমনকি দখলদারদের কোনো কবুলিয়তও সম্পাদিত হয়নি। ফলে জমিতে কোনো চাষির মালিকানা তৈরি হয়নি। বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ার পরও ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি সাফ কবলা দলিলে (দলিল নং ৩২৫, ৩২৬, ৩৮১, ৩১৫ ও ৬৮১) এবং একটি দানপত্র দলিলের মাধ্যমে ৫৬ দশমিক ৫২৫ একর সরকারি খাসজমি বেহাত হয়েছে। তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

এদিকে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সরকারপক্ষে মামলা দায়ের করেছি সরকারি সম্পত্তি সরকারের কাছে নিয়ে আসার জন্য। এ মামলায় ৫ জন জমি গ্রহীতা এবং ১৯ জন জমিদাতা এবং একজন সাবরেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ৪৮ একর জমি জমির দলিল পেয়েছি। শুধু এ জমি উদ্ধারেই মামলা হয়েছে। তারা আরও জমি নিয়েছে কিনা, বা আরও বেশি দখল করেছে কিনা, তা এখানে আসেনি।’

সাবরেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি জানেন এখানে জরিপ হয়নি। এগুলো সরকারি জমি। তারপরও তিনি কীভাবে রেজিস্ট্রি করলেন। যদি আমরা রায় পাই তখন তো এ দলিলগুলো বাতিলের জন্য তাকে অর্ডার দেবে।’

সাবেক সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগের যে সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন, তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় আমরা ইতোমধ্যেই তার অপকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here