Sunday, September 8, 2024
Homeঅর্থনীতিহরেক দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল, উদ্দেশ্য হাসিলের পর সরবরাহ বৃদ্ধি

হরেক দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল, উদ্দেশ্য হাসিলের পর সরবরাহ বৃদ্ধি

বাজারে ভোজ্য তেলের এখন দামের শেষ নেই। একেক বাজারে একেক দামে। হরেক রকম দামে বিক্রি হচ্ছে এই নিত্যপণ্যটি। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কোথাও বিক্রি হচ্ছে ১৯২ টাকায়, কোথাও ১৮৫ টাকায়, কোথাও ১৯০ টাকায় আবার কোনো কোনো দোকানে ২০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন দামে ভোজ্য তেল বিক্রি হওয়ার কারণ সম্পর্কে মুদি দোকানদাররা জানান, সরকারিভাবে যখন নতুন মূল্য ঘোষণা করা হয় তার আগে ও পরে তেলের দাম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ সরকার যখন দাম কমায় তখন সঙ্গে সঙ্গে কম মূল্যের তেল বাজারে ছাড়েন না ব্যবসায়ীরা, কিন্তু যখন দাম বাড়ানো হয় ঠিকই পরদিন থেকেই বাড়তি মূল্যের তেল বাজারে চলে আসে। তারা আগে থেকেই নতুন মূল্য লেবেল বোতলের গায়ে দিয়ে প্রস্তুত করে রাখে।

এর ফলে বাজারে আগের মূল্যের তেল, নতুন মূল্যের তেল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো পূর্বেকার মূল্যের তেলও বাজারে থাকে। এ জন্য যে দোকানে যে দামের তেল থাকে সে দোকানদার সে দামে বিক্রি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখ যায়, এ বাজারে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার প্রকারের দামে। ইউসুফ জেনারেল স্টোরে এক লিটারের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। অথচ বোতলের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে ১৮৫ টাকা। কারণ জানতে চাইলে দোকানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আগের দামের তেলই কোম্পানির লোকেরা আমাদের দিয়ে গেছে বাড়তি দামে। সরকার নতুন দাম ১৯২ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আগের তেল তারা আমাদের কাছে ১৮৮ টাকায় দিয়ে গেছে, আমরা ২ টাকা লাভে বিক্রি করছি ১৯০ টাকায়। এ ছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করছি ৯২০ টাকায়। অথচ এর গায়ে লেখা রয়েছে ৯১০ টাকা। নতুন দাম নির্ধারণ হয়েছে ৯৪৫ টাকা। আসলে কোম্পানির লোকেরা আমাদের যেভাবে দিয়ে যায় তেল আমরা সেভাবেই বিক্রি করি। এখানে আমাদের কোনো হাত থাকে না।’

পাশের দোকানটিতে এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকাতেই। কারণ নতুন মূল্যের তেল এখনও আসেনি এই দোকানে। এ দোকানের বিক্রেতা কবীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের দোকানে আগের মূল্যের তেল এখনও আছে অনেকগুলো। সরকার দাম বাড়িয়ে ১৯২ টাকা করলেও সে তেল এখনও আমরা পাইনি, সে জন্য আগের রেটের তেল আগের দামেই বিক্রি করছি।’

এদিকে কল্যাণপুর নতুন বাজারে দেখা গেল এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারের ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আবু সুলাইমান বলেন, ‘নতুন রেটের তেল আমরা এখনও পাইনি। এ জন্য আমাদের দোকানে আগের তেল রয়েছে। যখন এক লিটার ১৯৯ টাকা ছিল, সে সময়কার তেল রয়েছে। মূলত সেগুলোই আমরা ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। এর মধ্যে সরকার এক দফা কমিয়ে আবারও বাড়াল লিটারে ৭ টাকা। নতুন তেল আমরা হাতে পেলে সে দামে বিক্রি করব।’

এদিকে ব্যবসায়ীরা যে উদ্দেশে বিগত প্রায় ২০ দিন বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল, সে উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পর বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ কমিয়ে এতদিন বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট করে রাখা হয়েছিল, এখন দাম বাড়ানো হয়ে গেছে-উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আর এক দিন পর থেকেই বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বেড়ে গেছে।

ডলারের বাজারে অস্থিরতার কথা বলে গেল ৩ আগস্ট বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে ভোজ্য তেল আমদানিকারক ও উৎপাদক সমিতি। ২০ দিন পর গত মঙ্গলবার লিটারে সর্বোচ্চ ৭ টাকা বাড়াতে সম্মতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ক্রেতারা যেখানে দুদিন আগেও বোতলজাত ৫ লিটার তেল কিনতে পারেননি, সেখানে এখন প্রায় প্রতি দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতা আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও তিনটি দোকান ঘুরে এক দোকানে তেলের বোতলের গায়ের দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দিয়ে ২ লিটার তেল কিনেছি। বেশি দামে তেল কিনতে পকেটের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ এখন দেখছি দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ বেড়েছে। সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য। আক্ষেপ, ক্রেতাদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই।’

দোকানদার বলেন, ‘প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে চাহিদার বিপরীতে কোম্পানি থেকে তেল পাওয়া গেছে কম। গতকাল কোম্পানিকে চাহিদা দেওয়া হলে সকালেই তারা দিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ডিলারদের কাছে তেল চেয়ে পাননি। গত কয়েক দিন দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ। দাম বাড়ানো হবে এ জন্য নাকি ডিলাররা তেল মজুদ করেছেন। মঙ্গলবার দাম বাড়ার পর বুধবার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এখন হয়তো তেল পাওয়া যাবে।

৩ আগস্ট ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ভোজ্য তেল উৎপাদক সমিতি। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, বোতলজাত তেলের দাম ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার তেলের দাম ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫০ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়।

বিশ^বাজারে তেলের দাম ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে তেলের দাম সমন্বয় করা হয় গেল ১৮ জুলাই। এক মাস না যেতেই নতুন করে আবারও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ট্যারিফ কমিশন পর্যালোচনা করে প্রতি লিটারে ৭ টাকা দাম বাড়ায়।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মঙ্গলবার থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৯২ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৭৫ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ৯৪৫ টাকা। ১ লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৪৫ টাকা।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular