Sunday, September 8, 2024
Homeফিচাররাজপথে নেমে মার খাচ্ছে বিএনপি

রাজপথে নেমে মার খাচ্ছে বিএনপি

বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দফা নির্দেশনা দিলেও মাঠে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকারপ্রধানের বক্তব্য মাঠে উপক্ষিত হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে সরকারি দলের লোকজন যুক্ত হয়ে নিপীড়ন চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তারা আরও বেপরোয়া আচরণ করছে। অনুমতি নেওয়ার পরও কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না পুলিশ। বাধা দেওয়া হচ্ছে উঠান বৈঠকেও। এ অবস্থায় মাঠের কর্মসূচি নিয়ে অনেকটা চিন্তিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ২২ আগস্ট থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে দলের চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক স্থানে হামলা হয়েছে, আহত হয়েছে তিন শতাধিক ও গ্রেফতার হয়েছে দুই শতাধিক। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে প্রায় ২০টার মতো জায়গায়, আসামি করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে এবং মামলা করা হয়েছে ১৫টার বেশি। যশোরে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের বাড়িতে, জেলার সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল ইসলাম সাবু, মিজানুর রহমান, লক্ষ্মীপুরে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাড়িতে, টাঙ্গাইলের সফিপুরে আহমেদ আজম খানের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘অসংখ্য নেতাকর্মীকে সরকার বিনা বিচারে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে। দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, মিটিং-মিছিল করার কোনো অধিকার নেই, এমনকি কোনো সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয় না।’

এ হামলার পর বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবে কি না এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি তো আন্দোলন শুরুই করেছে, আমাদের লক্ষ্য একটাই-এ দানবীয় সরকারকে সরানো এবং গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।’

শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবসহ অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করছে দলটি। বিএনপির অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এ হামলা করেছে। তবে ছাত্রলীগ বলছে, বিএনপি থেকে তাদের শোকমিছিলে হামলা করে ১০ থেকে ১৫ জনকে আহত করা হয়েছে। এ নিয়ে পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় দলটি কোনো মামলা করেনি। তবে একই ঘটনায় বিএনপির ২৪১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ছাত্রলীগ।

এ ছাড়া অভিযোগ উঠেছে, নোয়াখালীর চাটখিলে প্রতিবাদ সভার মঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা। এতে আহত হয় কমপক্ষে ৩০ জন। খুলনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির ৯ নেতাকর্মী আহত হন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বিএনপির মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে বিএনপির সদস্য সচিবসহ আহত হয়েছেন ৫০ জন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও টাঙ্গাইলের সখীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে যশোরে শুক্রবার রাতে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই চার নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে আছেন। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে প্রথমে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগমের ঘোপ এলাকার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। নার্গিস বেগমের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম বিএনপির খুলনা বিভাগীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির লক্ষ্মীপুরের বাসায় হামলার অভিযোগ ওঠে। এ সময় এ্যানির ভাই ও ছেলেসহ চারজন আহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারীর নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

এসব হামলার পর দলের মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এখন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন যুক্ত হয়েছে। পুলিশ হামলা চালানোর সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে। একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের একজন নেতা বলেন, ‘ঘরবাড়িতে হামলা এর আগে দেখিনি। এমনিতেই কয়েক দিন আগে ভোলায় নেতা মারা গেল। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। কর্মীরা যখন অনেকটা সংগঠিত তখনই সরকারি দল পুলিশের সহায়তায় হিংস্র হয়ে উঠছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ বেসামাল হয়েছে। বিএনপির এত লোকসমাগমে তাদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন রাজপথ থেকে সরে যাওযার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে কেন্দ্র থেকে জোরালো কর্মসূচি না দিলে তৃণমূলে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। মামলার ভয় তো আছেই।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সরকার বিচলিত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে পেশিশক্তির ব্যবহার করছে। হামলা মামলায় বিএনপির এখন চাপে পড়ার আর সুযোগ নেই।’

দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘রাজপথে চাপ তো অবশ্যই বাড়ছে। কী পরিমাণ দমন-পীড়ন হচ্ছে, তা গণমাধ্যমেই উঠে আসছে। এখন আমাদের নতুন চিন্তা করতে হবে।’ ছাত্রদলের একজন নেতা জানান, নেতারা আমাদের বলেছেন, আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করতে। আমরা তা করছিও। সবখানে তো আমরা মার খাচ্ছি না। মার দিচ্ছিও। তবে কোনো ভাঙচুর কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যতটা সম্ভব গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মাঠে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে- বিএনপির এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘এসব বিএনপির বাজে কথা। কোথাও প্রশাসনিকভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। মিডিয়ায় এগুলো বলে তারা সামনে বাড়তে চায়। তবে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে গায়ে পড়ে খোঁচাখুঁচি কিংবা ঝগড়া করলে তো বাধা আসবেই।’

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular