Friday, September 20, 2024
Homeবাংলাদেশখরা শেষ না হতেই সারে নাকাল

খরা শেষ না হতেই সারে নাকাল

সারা দেশের মতো জয়পুরহাটেও মৌসুমজুড়ে চলে বৃষ্টির খরা। খরার ধকল শেষ হতে-না-হতেই সার-জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে নতুন সঙ্কটের মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এর মধ্যে আবার বাড়তি সেই দামেও সার না পাওয়ায় অনেকটা দিশেহারা জয়পুরহাটের কৃষকরা। তারপরও বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যে দিয়ে আমন ধানের রোপণ শেষ করেছেন অধিকাংশ কৃষক। কিন্তু এবার সার সঙ্কটে আমন চাষাবাদ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই জেলার অধিকাংশ কৃষকের। তাদের অভিযোগ, কোথাও চাহিদামতো সার পাওয়া যাচ্ছে না।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, বাজারের সাব-ডিলারদের (খুচরা) দোকানগুলোতে ইউরিয়া সার পাচ্ছেন না। বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলারদের দোকানে গিয়েও কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সার দেওয়া হচ্ছে না। ডিলারদের দোকানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর পাঁচ-দশ কেজি করে ইউরিয়া সার দেওয়া হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।


সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, তাড়াহুড়ো করে এরই মধ্যে ধান রোপণের কাজ শেষ করেছেন অনেক কৃষক। নিয়ম অনুযায়ী রোপণের দুই-তিন সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে সার ছিটিয়ে দিতে হবে সবুজ ধানক্ষেতগুলোতে। তাই ধান রোপণের পাশাপাশি সার সংগ্রহে ধানচাষিদের দৌড়াতে হচ্ছে সার, ডিলার ও বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে।

আক্কেলপুরের কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘খুচরা দোকানে গিয়ে ইউরিয়া সার পাইনি। ডিলারের দোকানে এসেছি। আমাকে ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়েছে। আমার এক বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া সারের দরকার। আর সার কোথায় পাই সেই চিন্তাই করছি। এখন বেশি দামেই কিনতে হবে।’ কালাইয়ের কৃষক আজমল হোসেন বলেন, ‘আমার ২০ কেজি সার দরকার। আমাকে পাঁচ কেজি সার দিয়েছে। হাতিয়ার বাজারে খুচরা দোকানে সার নেই।’

খুচরা সার ব্যবসায়ী সুজন কুমার মণ্ডল বলছেন, বিসিআইসির অনুমোদিত ডিলাররা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছেন না। আবার দামও বেশি নিচ্ছেন। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সার। প্রশাসনের কড়া হুঁশিয়ারি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে ডিলাররা দোকানে সার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তাদের অভিযোগ, ডিলাররা নাকি এ মাসে সরকারিভাবেই সারের বরাদ্দ কম পেয়েছেন। তাই তারা চাহিদা মোতাবেক সার দিচ্ছেন না।


আক্কেলপুর কলেজ বাজারের খুচরা সার (সাব-ডিলার) বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনুমোদিত ডিলাররা তাদের সার দিচ্ছেন না। আবার সারের যে দাম নিচ্ছেন তাতে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি না করলে লোকসান হবে। আবার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। এসব কারণে তারা সার বিক্রি করছেন না।
এদিকে আক্কেলপুরের বিসিআইসির ডিলার আমিনুল ইসলাম ও কালাইয়ে বিসিআইসির ডিলার হুমায়ন কবির তালুকদার বলেন, সারের জন্য এ পর্যন্ত কোনো কৃষকই ফেরত যাননি। পর্যাপ্ত সার না থাকায় কম-বেশি করে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে না। তবে বরাদ্দ বেশি পেলে অবশ্যই তাদেরও সার দেওয়া হবে।

সার সঙ্কটের অভিযোগ অস্বীকার করে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জয়পুরহাটে এ মৌসুমে ৬৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের জন্য তিন মাসে আট হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার মজুদ আছে। এ মজুদ পর্যাপ্ত, তাই সারের কৃত্রিম সঙ্কট যাতে না ঘটে, তাই নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানালেন জেলার প্রধান কৃষি কর্মকর্তা।

জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জানামতে সারের কোনো সঙ্কট নেই। কৃষকরা আলুর জন্য আগাম সার মজুদ করছেন বলে জানতে পেরেছি। কারণ জেলার সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ এই দুই উপজেলায়। যদিও কেউ সারের দাম বেশি নেন তাহলে ওই দোকানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular