Home বিশ্ব চ্যালেঞ্জের পাহাড় ঋষির সামনে

চ্যালেঞ্জের পাহাড় ঋষির সামনে

0

যুক্তরাজ্যের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ এবং কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক। এরই মধ্যে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে গতকাল প্রথা অনুযায়ী ঋষিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বাকিংহ্যাম প্যালেসে আমন্ত্রণ জানান রাজা চার্লস। নিয়োগপত্র গ্রহণ করে এর পর ঋষি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে জাতির উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণও দিয়েছেন। যেখানে তার কথায় শোনা গেছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকা যুক্তরাজ্যকে ঠিক পথে ফেরাতে আত্মবিশ্বাস। একই সঙ্গে চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি মোকাবিলার কথাও ছিল তার ভাষণে। যদিও রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতই আত্মবিশ্বাসী হোন না কেন, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সঠিক পথে ফেরানোর কাজটা এত সহজ হবে না ঋষির জন্য।

বিশেষ করে ব্রেক্সিট পরবর্তী সংকটের মুহূর্তে কোভিড মহামারীর ধাক্কা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে যে ধস নামিয়েছে, তাতে প্রাণ ফেরানোই হবে ঋষির প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও ঐক্য ফিরিয়ে এনে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারেও কাজ করতে হবে তাকে। ফেরাতে হবে আগাম নির্বাচনের জন্য আসা ঝড়-ঝাপটা।

রাজার কাছ থেকে নিয়োগ পেয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে ভাষণে নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি গভীর সংকটের সম্মুখীন। বিগত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত সংশোধনের জন্য তাকে টোরি দলের নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। তিনি চেষ্টা করবেন সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার। কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ অর্থনীতি যে সংকটের মধ্যে পড়েছে সেটা থেকে উত্তরণই আমার প্রধান লক্ষ্য। এ সময় ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে মহামারী পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে অস্থির করে তোলায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। এদিকে ঋষি সুনাকের সামনে সরকার পরিচালনায় কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তা নিয়ে এখন চলছে যুক্তরাজ্যজুড়ে আলোচনা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বড় পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ তার দল কনজারভেটিভ পার্টি বর্তমানে সব দিক থেকে কড়া সমালোচনার মুখে রয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ ধনকুবের গাই হ্যান্ডস যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য কনজারভেটিভ পার্টিকে সরাসরি দায়ী করেছেন। তিনি মনে করেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে কনজারভেটিভদের নীতি হচ্ছে অধিকতর কর ও সুদ আদায় কিন্তু কম পরিষেবা। ব্রিটিশ সরকারকে ব্রেক্সিট পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে ব্রিটিশ অর্থনীতি পরিষ্কারভাবে ধ্বংস হবে।

এর আগে করোনা মহামারীর উত্তাল সময়ে ভেঙে পড়া অর্থনীতি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে যুক্তরাজ্যের বরিস জনসনের সরকার। তার পর লিজ ট্রাসের সরকার অর্থনৈতিক সে অনিশ্চয়তাময় পরিস্থিতি আরও গাঢ় করে তোলে। বরিস জনসনের সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো ঋষি সে সময়ও পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। লিজ ট্রাসের মাত্র ৪৫ দিনের সরকারে ঋষি ব্যস্ত ছিলেন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। ফলে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কতটুকু কী করতে পারবেন তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে।

লিজ ট্রাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি নিম্ন করহার ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির ব্রিটেন গড়ে তুলবেন। কিন্তু তার ঘোষিত নীতির কারণে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দরপতন হয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত। ঋষির সময়কালেও ইউক্রেন যুদ্ধ আরও ঘণীভূত হচ্ছে, যা চাপ বাড়াচ্ছে গোটা ইউরোপ অঞ্চলের ওপর। এমন পরিস্থিতিতে ঋষিকে সাফল্য পেতে হলে অভাবনীয় নেতৃত্বই দেখাতে হবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here