Thursday, September 19, 2024
Homeবিশ্বমার্কিন সাহায্য কমে গেলে ইউক্রেনে কী হবে?

মার্কিন সাহায্য কমে গেলে ইউক্রেনে কী হবে?

যুক্তরাষ্ট্র মধ্যবর্তী নির্বাচন আসছে আর অল্প কিছুকাল পরই। ঠিক এই সময়ই রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে তারা যদি কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারেন- তাহলে তারা ইউক্রেনকে সাহায্য দেওয়া কমিয়ে দেবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেখানে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেই বড় এক সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে- সেখানে যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন কোন ভূমিকা নেয় তাহলে তা ঘটনাপ্রবাহের গতিপথই বদলে দিতে পারে।

কিন্তু সত্যিই কী এমন কোনো পরিবর্তন হবে?


ইউক্রেনকে এত সামরিক সাহায্য দেয়ার দরকার কি? প্রশ্ন করছেন অনেকে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে- যাতে দেখা যাচ্ছে এমন এক দৃশ্য যা রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির যুদ্ধের মোড় বদলে দিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন-নির্মিত হিমার্স রকেট নিক্ষেপের দৃশ্য। একটা আগুনের লেজ তৈরি করে রকেটটি ওপরের দিকে উঠলো। তার পর সেটি যখন লক্ষ্যে আঘাত করলো- তখন তৈরি হলো এক বিশাল আগুনের গোলা, যা রাতের আকাশকে আলোকিত করে তুললো।

ইউক্রেনকে মোট ১৮টি হিমার্স রকেট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র- যার পুরো নাম হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম।

এটি হচ্ছে আমেরিকানরা ইউক্রেনকে যে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দিয়েছে তারই একটা অংশ। বাকি সব দেশ মিলে ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সাহায্য দিয়েছে- এ পরিমাণ তার দ্বিগুণ বেশি। ইউক্রেনের সরকার তো বটেই, সামরিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই সহায়তা তাদের মিশনের জন্য অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এটা না দিলে ইউক্রেনীয়ানরা সম্পূর্ণ পরাভূত হয়ে যেতো- বলছিলেন মার্ক কানসিয়ান- একজন সাবেক মার্কিন মেরিন কর্নেল এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ।

কিন্তু অচিরেই হয়তো এই সামরিক সাহায্য আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। কারণ কিছু রিপাবলিকান আইন প্রণেতা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, আমেরিকানরা যখন জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে – তখন এসব সাহায্য দেবার যৌক্তিকতা কতটুকু?

রিপাবলিকানরা কী বলছে?

অক্টোবর মাসেই প্রথম দিকে মার্কিস প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু রিপাবলিকানদের একজন নেতা কেভিন ম্যাককার্থি আভাস দিয়েছিলেন যে কংগ্রেসে যদি রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তারা ইউক্রেনকে ব্ল্যাংক চে’ দিতে অতটা আগ্রহী হবে না।

আমার মনে হয় লোকে একটা মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে, বলেন ম্যাককার্থি। তার কথা, এই আমেরিকানরা ইউক্রেনকে ঢালাও সামরিক সাহায্য দেবার ব্ল্যাংক চেক দেবে না। অন্য রিপাবলিকানরা একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

মে মাসে মিসৌরি রাজ্যের সিনেটর জশ হাউলি বলেন, ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া আমেরিকার স্বার্থের অনুকুল নয় এবং এটা ইউরোপকে এই উদারতার সুযোগ নেবার রাস্তা করে দেবে। দৃশ্যত এসব মন্তব্যে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে একটা বিভক্তির আভাস পাওয়া যায়।

কারণ, এই রিপাবলিকান পার্টিরই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অতীতে কঠোর ভাষায় তার নিজের দলে যারা ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে সাফাই গায় তাদের নিন্দা করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, তিনি এও বলেছিলেন যে এদের কারণে বাকি বিশ্বের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে।

এরই পাশাপাশি সেনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল হোয়াইট হাউসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া দ্রুততর করা হয়।

কারণ তার ভাষায়, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের যা যা দরকার সেটা সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। মনে রাখতে হবে কিছুকাল আগে ইউক্রেনের জন্য ৪ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজের পক্ষে যারা ভোট দিয়েছিলেন তারা সবাই রিপাবলিকান। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ৫৭ জন বিপক্ষে ভোট দেন, আর উচ্চকক্ষ সেনেটে দেন ১১ জন।

সত্যি কি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে সাহায্য দেওয়া কমিয়ে দেবে?

ইউরোপে এমন একটা উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে যে আগামী দিনগুলোতে কি হতে যাচ্ছে। আমেরিকা যদি সরে যায়, তাহলে পুতিন হয়তো পরাজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে জয় ছিনিয়ে নেবেন – ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন টোবায়াস এলউড এমপি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান।

কিন্তু ইউক্রেনের কর্মকর্তা এবং মার্কিন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নভেম্বর মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই হোক না কেন- ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ অন্তত স্বল্পমেয়াদে কমে যাবে এমন সম্ভাবনা কম।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সেই রেজনিকভ বলেছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তার যেসব বৈঠক হয়েছে – তাতে তিনি আস্থাশীল যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই হোক – ইউক্রেনের জন্য উভয় দলের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

তিনি যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতারাই ছিলেন।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular