Monday, September 16, 2024
Homeফিচারসঞ্চয়পত্র এবার বিক্রির চেয়ে ভাঙানো বেশি

সঞ্চয়পত্র এবার বিক্রির চেয়ে ভাঙানো বেশি

সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমে যাওয়ার পর এবার ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে ভাঙানো হয়েছে বেশি, যার পরিমাণ প্রায় ৭১ কোটি টাকা। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি প্রায় ২৬ গুণ কমেছে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলক বেশি মুনাফা (সুদ) দেয় সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সঞ্চয়পত্রে বেশি আগ্রহী হচ্ছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার পর অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের, যার প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়ের ওপর। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকেই এখন সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ফলে নির্দিষ্ট মেয়াদপূর্তির আগেও অনেকে সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। কেউ আবার মেয়াদপূর্তিতেও পুনর্বিনিয়োগ না করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এর মধ্যেও যাদের কিছু সঞ্চয় আছে, তারাও কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে খাটাতে আগ্রহী হচ্ছেন না। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের

নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, সাধারণত সঞ্চয় করেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। মূল্যস্ফীতির গড় হিসাব সরকারিভাবে যা প্রকাশ করা হচ্ছে, তার চেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের খরচ বাস্তবে অনেক বেশি। ফলে সংসার চালাতে সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন মানুষ।

প্রতি অর্থবছরের বাজেটে নিট বিক্রি হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯৭৩ কোটি ২৩ লাখ টাক। একই সময়ে ভাঙানো হয়েছে ৭ হাজার ৪৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফলে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭৩ কোটি টাকা। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল বা আসল পরিশোধের পর যা থাকে, তা নিট বিক্রি হিসেবে পরিগণিত হয়। এই নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ বলা হয়। আগের মাস আগস্টে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ কোটি টাকা। আর জুলাই মাসে ছিল ৩৯৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ২১ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ফলে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ২ হাজার ৮২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, আগস্টে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি ৫৮ লাখ এবং জুলাই মাসে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular