Home খেলা গোল্ডেন বুটে ত্রিমুখী লড়াই

গোল্ডেন বুটে ত্রিমুখী লড়াই

0

দিনে দিনে কাতার বিশ^কাপ এখন প্রান্তসীমায়। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ৩২ দলের ২৮টিই ঝরে পড়েছে। টিকে আছে চারটি দল। এদের মধ্যে মহাবিস্ময় আফ্রিকান জায়ান্ট মরক্কো। বাকি তিনটি দল- দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আজ প্রথম সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। আগামীকাল ফাইনালে ওঠার দ্বিতীয় লড়াইয়ে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ মরক্কো।

ফ্রান্সের সামনে সুযোগ ইতালি কিংবা ব্রাজিল হওয়ার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পরপর দুবার ট্রফি জিততে পারেনি আর কোনো দল। ফরাসিদের সামনে ৬০ বছরের পুরনো রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি। ১৯৩০ ও ১৯৩৪ বিশ^কাপের ট্রফি জিতেছিল ইতালি। সবশেষ ১৯৬২ বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রেখেছিল ব্রাজিল। ১৯৯৮ সালে নিজেদের রেকর্ড আরেকবার ছোঁয়ার সুযোগ এসেছিল সেলেকাওদের সামনে। কিন্তু দিদিয়ের দেশামের ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

খেলোয়াড় ভূমিকায় বিশ্বকাপ জেতা দেশাম দেশকে কোচ হিসেবেও এনে দিয়েছেন বৈশ্বিক মুকুট। এবার তার সামনে বিরল এক রেকর্ডের হাতছানি। প্রথম কোচ হিসেবে পরপর দুটি শিরোপার জয়ের সুযোগ দেশামের কাছে। স্বপ্নপূরণে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র কিলিয়ান এমবাপ্পে। গত বিশ্বকাপের সেরা তরুণ এবার আরও পরিণত হয়ে ফিরেছেন। উত্তপ্ত মরুর বুকে আগুন ঝরাচ্ছেন তিনি। পিএসজি সুপারস্টারের আগুনে পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে শিরোপা থেকে দুই ধাপ দূরে এসে দাঁড়িয়েছে ফ্রান্স।

গত বিশ^কাপে ৪ গোল করেছিলেন এমবাপ্পে। এবার তার গোল সংখ্যা একটি বেশি। ৫ গেল করা ফরাসি সেনসেশনই এবারের আসরে গোল্ডেন বুট জয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন। কিন্তু সবশেষ ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল পাননি এমবপ্পে। তবে জালের নাগাল পেয়েছেন অভিভার জিরু। ৪ গোল করেছেন তিনি।

অথচ গত বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ খেলে একটি গোল পাননি ফরাসি স্ট্রাইকার। ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলেও জির্রুকে নিয়ে প্রচুর ট্রল হয়েছে। ফ্রান্সের এবারের বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়েও তো সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত তার ওপর আস্থা রেখেছেন দেশম। গুরুর আস্থার প্রতিদান দিয়েই চলছেন জিরু। সতীর্থ স্ট্রাইকার ও দলের সবচেয়ে বড় তারকা করিম বেনজেমার অভাবটা বুঝতেই দিচ্ছেন না তিনি। শেষ আটের ম্যাচে এমবাপ্পে নিষ্প্রভ থাকলেও তিনি জ্বলে উঠেছেন।

ব্যক্তিগত পুরস্কার গেল্ডেন বুট পাওয়ার লড়াইয়ে ভালোভাবেই আছেন দুই ফরাসি ফরওয়ার্ড। তাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছেন লিওনেল মেসি। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে চলেছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। নিজে গোল করছেন এবং সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন। গোল্ডেন বল পাওয়ার দৌড়ে কার্যত তিনিই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। কিন্তু গোল্ডেন বুট জয়ের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছেন তিনি। শেষ ষোলোর রাউন্ড পর্যন্ত তার গোল ছিল তিনটা। এমবাপ্পে এই পর্বে গোল না পাওয়ার সুযোগটা তিনি কাজে লাগিয়েছেন। ব্যবধান আরও কমিয়ে এনেছেন মেসি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি করেন এবারের বিশ্বকাপের চতুর্থ গোল। চলে আসেন গোল্ডেন বুট পাওয়ার লড়াইয়ে। আসরে এখন আর দুটি করে ম্যাচ পাবেন এই তিন ফুটবলার। তা ম্যাচের ফল যা-ই হোক না কেন। সেমিফাইনালে হারলেও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলার সুযোগ আসবে। এই দুটি ম্যাচেই নির্ধারণ হয়ে যাবে গোল্ডেন বুটের ভাগ্য। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের এই মুকুটটি জিতেছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন। এবার অবশ্য পুরোদস্তুর স্ট্রাইকারের ভূমিকায় খেলেননি ইংলিশ স্ট্রাইকার। প্লে-মেকার হিসেবে খেলতে দেখা গেছে তাকে। সতীর্থদের গোল করানোই ছিল তার মূল দায়িত্ব। যেটি কেন করেছেন। পাশাপাশি নিজেও দুটি গোল করেছেন। দুটোই অবশ্য পেনাল্টি থেকে!

গোল্ডের বুটের লড়াইটা এখন মূলত ত্রিমুখী। এমবাপ্পে, মেসি ও জিরুর লড়াই। কারণ ৪টি গোল নেই আর কারোরই। তিনটি করে গোল আছে সাতজন ফুটবলারের। তারা হলেন- রিচার্লিসন, ইনার ভ্যালেন্সিয়া, মার্কাশ রাশফোর্ড, বুকায়ো সাকা, কোডি গাকপো, গনসালো রামোস ও আলভারো মোরাতার। এদের মধ্যে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলেছেন রামোস। দুই ম্যাচ খেলেছেন তিনি। শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন পর্তুগিজ তরুণ ফরওয়ার্ড। যা এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ও একমাত্র হ্যাটট্রিক। ২১ জন ফুটবলার দুটি করে গোল করেছেন। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের ২২তম আসরে ৬০ ম্যাচে ১৫৮টি গোল হয়েছে। যার ১৫৪টিই প্রতিপক্ষ ফুটবলারের। কিন্তু দুটি গোল আত্মঘাতী হয়েছে। নিজেদের জালে বল জড়িয়েছেন আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ এবং মরক্কোর নায়েফ অ্যাগুয়ের্ড গোল ঠেকাতে গিয়ে নিজেই বল পাঠিয়ে দেন নিজেদের জালে!

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here