হাড় কামড়ে ধরা শীতের দাপুটে প্রভাবে কাঁপছে দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রচণ্ড এই শীতে চারদেয়ালের ভেতরে বসবাসকারীদের জবুথবু দশা; দরিদ্র মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এমন শীতে ‘সকালের এক টুকরো রোদ্দুর/এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামী।’
অথচ গত শনিবার সূর্যের দেখাই মেলেনি। গতকাল খানিকটা সময়ের জন্য দেখা মিললেও নিস্তেজ রোদে কমেনি তীব্র হিমশীতলতা। শুধু তাই নয়, গতকাল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ছিল ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা দেশে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। সেখানে তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী, নিঃসন্দেহে। আবহাওয়াবিদরাও বলছেন তাই। তবে তারা এও বলছেন, আরও দুটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। অন্যটি হচ্ছে ঘন কুয়াশার প্রলেপ। এ কারণে শীতের ব্যাকরণ পাল্টে গেছে। তাদের মতে, সাধারণত ঢাকায় এ সময়টাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। কিন্তু গতকাল রবিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য কুয়াশা কেটে যাওয়ায় দুপুরে রোদের দেখাও মিলেছে, যদিও তাতে তেজ ছিল না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দুবার ঢাকাসহ দেশের সব আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে আকাশে বেলুন উড়িয়ে স্বয়ংক্রিয় একটি যন্ত্রের মাধ্যমে তাপমাত্রা মেপে থাকে। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উঁচুতে ওঠা যায়, তাপমাত্রা তত কমতে থাকে। অবশ্য কোনো এলাকায় কুয়াশার স্তর যত ঘন হয়, সেখানকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ততই কমে আসে। আর ভূপৃষ্ঠের ৫০০ মিটার ওপর থেকে প্রতি কিলোমিটারে তাপমাত্রা দুই-তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস করে কমতে থাকে। ঢাকার ওপরে চাদরের মতো প্রলেপ তৈরি করা কুয়াশার কারণে আবহাওয়ার চলতি ব্যাকরণে ব্যত্যয় ঘটেছে। ভূপৃষ্ঠের তুলনায় ওপরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। কুয়াশার ওপরের স্তরে রোদ থাকলেও ভূপৃষ্ঠে তা প্রবেশ করতে পারছে না। তাদের অভিমত, দেশে দিন-রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম। এর কারণে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে আসতে পারছে না। ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং এর সংলগ্ন বাতাসের উষ্ণতা বাড়তে পারেনি।