মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগসহ অন্তত দশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ পদ শূন্য হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। এসব পদে নতুন কোনো কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে নানা হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। কারণ এ পদগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাজে সম্পৃক্ত থাকেন। আর এখন যাদের পদায়ন করা হবে, তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এমন প্রেক্ষাপটে কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে সরকার এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে চাইছে। এভাবেই ঢেলে সাজানো হচ্ছে প্রশাসন। অতীতেও দেখা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার প্রশাসন ঢেলে সাজাতে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল।
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ পদে নিয়োগ পেতে সব সময় কর্মকর্তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রতিযোগিতা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। তারা চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। কারণ আর এক বছর কয়েক মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে দেশের সার্বিক রাজনীতির গতি প্রবাহ কোন দিকে যাবে- এ ভাবনা তাদের মাথায় কাজ করছে। বর্তমান সরকারের তিন দফায় যারা পদোন্নতি ও কাক্সিক্ষত মন্ত্রণালয়ে পদায়নের জন্য সরকারদলীয় সমর্থিত তকমা নিয়েছেন, এখন তাদের কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব নিতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ চিত্র বেশি দেখা যাচ্ছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক ও জেলার পুলিশ সুপারসহ মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে নানা সূত্র থেকে খোঁজখবর নেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসছে। এ ক্ষেত্রে যাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হবে, তিনি সরকারের প্রতি অনুগত কিংবা বিরোধী পক্ষের সঙ্গে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক যোগসূত্র আছে কিনা তা দেখা হয়ে থাকে। নানা কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় এখন নির্বাচনী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কোনো পদে কোনো কর্মকর্তাকে পদায়নের ক্ষেত্রে দফায় দফায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিষয়ে। তার পর তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। গত আগস্টে ৪০ জেলার পুলিশ সুপারকে পদায়নের ক্ষেত্রে দফায় দফায় একাধিক গোয়েন্দা সূত্র থেকে তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়। জেলা প্রশাসকদের পদায়নের ক্ষেত্রেও অনুরূপ প্রক্রিয়া মেনে চলা হচ্ছে।