প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রাথমিক তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে সার্চ কমিটি। অধিকতর যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম উপস্থাপনের জন্য আগামীকাল শেষবারের মতো বৈঠকে বসবে কমিটি। তবে এই তালিকা প্রকাশ করবে না বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি।
গতকাল রোববার বিকালে সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা নিয়ে বসে সার্চ কমিটি। দুই ঘণ্টার বৈঠকে তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে কমিটি। জানা গেছে, ১০ জনের নামের সঙ্গে বৈঠকে আরও দুজনের নাম আলোচনায় এসেছে। সেক্ষেত্রে সেই দুজনসহ ১২ জনের নাম রেখেই গতকালের বৈঠক মুলতবি করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইনের আওতায় সার্চ কমিটি হওয়ার পর ছয়টি বৈঠক করেছি। আরেকটি বৈঠক বাকি আছে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টায় সপ্তম বৈঠক করার মধ্য দিয়ে আপাতত কাজ শেষ করতে পারব।’
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘চারটি বৈঠক করেছি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। আপনারা জানেন, প্রথমে ৩২২ জনের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এ তালিকার পর আরও চারজন বিশিষ্ট সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমরা তাদের ডাকি। তারাও কিছু নাম দিয়ে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাম দেওয়ার জন্য একদিন সময় বাড়িয়েছিলাম। এরপরও বলেছিলাম যদি কোনো রাজনৈতিক দল নাম পাঠায়, তাহলে বিবেচনায় নেব। সময় বাড়ানোর পর কিছু রাজনৈতিক সংগঠন আরও কিছু নাম পাঠিয়েছে। সব নাম বিবেচনায় নিয়ে আমরা পঞ্চম সভায় ২০ জনের নাম চূড়ান্ত করি।’
সার্চ কমিটির প্রধান বলেন, ‘আজকের সভায় আমরা ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করতে পারিনি। তবে কাছাকাছি এসেছি। ১২-১৩ জনের মধ্যে ১০ জনের নাম খুঁজে বেড়াচ্ছি। আশা করি ১০ জনের নাম পেয়ে যাব। ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা সর্বশেষ বৈঠক করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম পাঠিয়ে দিতে পারব। আইন অনুযায়ী আমাদের ১৫ কার্যদিবস রয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে; তার আগেই ২৪ তারিখের মধ্যে নাম পাঠিয়ে দেব।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে সার্চ কমিটি। আমরা একটি শপথ নিয়েছি। যেখানেই যাই, সেই শপথ আমাদের সঙ্গে থাকে। সংবিধান ও আইন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আইনে বলা আছে কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করব আমরা। আমরা নির্ধারণ করেছি।’
অপর প্রশ্নের জবাবে সার্চ কমিটির প্রধান বলেন, ‘১০ জনের নাম প্রকাশ করব না। এটা রাষ্ট্রপতির ডোমেইন। রাষ্ট্রপতির কাছে দিলে পরে তিনি যদি বলেন আপনারা প্রকাশ করুন, তাহলে প্রকাশ করব। এটা তার সম্পত্তি, তার কাছেই দিতে হবে। আমাদের প্রকাশ করার কোনো আইন নেই।’
রাষ্ট্রপতির কাছে দেখা করে নামগুলো জমা দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই তো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পারি না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার দুটি শর্ত, একটা হলো করোনামুক্ত হতে হবে, আরেকটি হলো তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে হবে।’
সূত্র জানায়, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। সেদিনই নতুন নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা আসতে পারে।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ৫ ফেব্রুয়ারি গঠিত সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোসহ নাগরিকদের কাছে পছন্দের ব্যক্তিদের নাম চেয়েছিল। ২৪টি রাজনৈতিক দল ও ৬টি সংগঠন নামের তালিকা জমা দিয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে নামের তালিকা জমা দিয়েছিলেন। তবে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বেশ কয়েকটি দল নাম দেওয়া থেকে বিরত ছিল। মোট ৩২২ জনের নাম পেয়েছিল সার্চ কমিটি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই তালিকা প্রকাশ করে কমিটি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সেই তালিকা ২০ জনে নামিয়ে আনার পর গতকাল সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ফের বৈঠকে বসেন কমিটির সদস্যরা। তাদের মধ্য থেকে ১২-১৩ জনের নাম ঠিক করা হয়েছে। সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে, সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
আইনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে সার্চ কমিটি। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি পদের জন্য দুজন এবং নির্বাচন কমিশনারের চারটি পদের জন্য আটজনের নাম তারা প্রস্তাব করবেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তার তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে; কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্তত ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।