শিক্ষার্থীদের টিকাদানে পিছিয়ে ৩৪ জেলা

0
137

করোনা মহামারী প্রতিরোধে দেশে শিক্ষার্থীদের টিকাদানের আওতায় আনা হয় গত ১ নভেম্বর। এই কার্যক্রমে এখনো পিছিয়ে রয়েছে ৩৪ জেলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে ৩৪ জেলায় এই হার অনেক কম। ৪০ শতাংশের কম টিকা পেয়েছে দুটি জেলার শিক্ষার্থীরা, ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ১৫টি জেলা এবং ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে ৩৮টি জেলায়। আর ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে ৯ জেলায়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, টিকাদানে এখনো ঘাটতি পূরণ হয়নি। সে কারণে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল পর্যায়ে এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হবে। ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা এই টিকা পাবেন। ১৮ বছরের নিচে যারা, তাদের টিকা কার্যক্রমও চলবে।

ডব্লিউএইচওর হিসাব বলছে, পিছিয়ে থাকা ৩৪ জেলার মধ্যে গোপালগঞ্জে এ পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ শতাংশ, পিরোজপুরে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মাদারীপুরে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ, শরীয়তপুরে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ, রাঙ্গামাটিতে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ, শেরপুরে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ, ব্রহ্মণবাড়িয়ায় ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ, নেত্রকোনায় ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ফরিদপুরে ৫৬ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশ, লক্ষ্মীপুরে ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ, নোয়াখালীতে ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ, কিশোরগঞ্জে ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ, মুন্সীগঞ্জে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যশোরে ৬১ দশমিক ০ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ, বান্দরবানে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ, নীলফামারীতে ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ, ভোলায় ৬৩ শতাংশ, সিরাজগঞ্জে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ, কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৬৫ শতাংশ, সিলেটে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ, নরসিংদীতে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ, মানিকগঞ্জে ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ, কক্সবাজারে ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ে ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং টাঙ্গাইলে ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে ঢাকা বিভাগে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ ৪১ দশমিক ২ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৬১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। খুলনা বিভাগে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪০ দশমিক ২ শতাংশ। সবচেয়ে কম টিকা পেয়েছেন সিলেট বিভাগের মানুষ। এই বিভাগে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া টিকাদানে পিছিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগ। এই বিভাগের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩১ লাখ ৭ হাজার ৭৭ জন। সেই হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে হলে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩৭ জনকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এর মধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে রয়েছেন ১০ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে এক কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ৮ কোটি ৬৪ লাখ এবং ১২ থেকে ১৭ বছরের এক কোটি ৪৫ লাখ। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের জনগোষ্ঠী দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৬ কোটি ৫৬ লাখ এবং ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যের জনগোষ্ঠী ৫৯ লাখ। এ ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ২৭ লাখ মানুষ। তবে ১৮ বছরের নিচের কেউ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বুস্টার ডোজ পাননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে ২৭ কোটি ৯৭ লাখ ২৪ হাজার ৬শ ডোজ। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮১ হাজার ১১০ ডোজ; ফাইজারের ৩ কোটি ৮৯ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ ডোজ; মডার্নার এক কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৬০ ডোজ; সিনোফার্মের ১১ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ডোজ; সিনোভ্যাকের ৬ কোটি ৪৬ লাখ ৫ হাজার ৪০ ডোজ এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫০ ডোজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here