![Russia's President Putin attends a meeting outside Moscow](https://thedailybanglarbarta.com/wp-content/uploads/2022/02/Putin-sanctions-large-696x398.jpg)
ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন চালালে পশ্চিমা দেশগুলো যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেবে তা মস্কোর অজানা ছিল না। বরং বেশ কিছুদিন থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা নেতারা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছিল। তার পরও পুতিন নিচের চালটি দিলেন। পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে সেখানে রুশ সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর পরই মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার পাহাড় জমে যাচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত পুতিন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো এখনো সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেনি। পূর্ব ইউক্রেনের সেনা পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাদের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র তার তার মিত্র দেশগুলো।
রুশ পদক্ষেপের প্রতিবাদে সবার আগে যুক্তরাজ্য রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক ও তিন ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক এবং ব্যাংক সি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞার খবর জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ ছাড়া তিন ধনকুবের যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন; তারা হলেন- গেনেদি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ ও ইগোর রোটেনবার্গ। নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাজ্যে তাদের সব সম্পদ জব্দ করা হবে, দেশটিতে তাদের ভ্রমণও নিষিদ্ধ থাকবে। এদিকে গতকাল ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুস বলেছেন, মস্কোর ওপর তারা আরও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছেন।
এদিকে ইউরোপের এ জোটটি রাশিয়ার ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংকও আছে; ইউরোপীয় পুঁজিবাজারে প্রবেশ সীমিত করছে, ইইউ ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস করছে। গত মঙ্গলবার রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু ছিল রুশ সামরিক বাহিনীর কর্মকা-ে রাশিয়ার অর্থায়ন সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা।
জার্মানি জানিয়েছে, তারা রাশিয়া থেকে তাদের দেশে আসা নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইনটি অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সমর্থন দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞার প্রথম দফায় রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন ৮ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও তাদের তেল ও গ্যাস খাতকে ‘টার্গেট’ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইউক্রেইনে মস্কোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ‘একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ’ হিসাবে অ্যাখ্যা দিয়ে পুতিনের ঘোষণায় পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন বন্ধের ঘোষণা দেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, তিনি জাপানে রাশিয়ান বন্ড ইস্যু নিষিদ্ধ করবেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও বেশ কিছু রাশিয়ান ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করবেন।
আরও যেসব নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে : ইউক্রেইনে আগ্রাসন বাড়ালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বার্তা পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ পড়তে পারে রাশিয়া। বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহার করে। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো দেশগুলোও ক্ষতির শিকার হবে। এছাড়া মার্কিন ডলার জড়িত এমন আর্থিক লেনদেন থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে রাশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি কমিয়ে দিতে পারে পশ্চিমারা। রুশ অর্থনীতি
বিদেশে গ্যাস ও তেল বিক্রির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। পশ্চিমারা এর ওপর আঘাত হানতে পারে। কিন্তু এখানে মনে রাখা দরকার, জার্মানির মতো দেশ তার গ্যাস সরবরাহের এক-তৃতীয়াংশের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। কাজেই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে পশ্চিমাদের অন্তত দশবার করে অংক কষে নিতে হবে।