দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সৌদি থেকে ১০৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বিপরীতে রপ্তানি করেছে মাত্র ২৬ কোটি ডলার। এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকার বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সৌদি আরব বাংলাদেশে অন্তত ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। এদিকে সৌদি আরব বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সেদেশের জন্য জমি বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে সৌদি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পার্লামেন্টে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সৌদি আরবের বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। তারা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য জমি পছন্দ করতে পারেন। বৈঠককালে রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে বিনিযোগে আগ্রহী। তিনি আরো বলেন, পর্যটন, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বহুমুখী সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তেল শোধনাগার, পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্য ও ওষুধ শিল্প, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, পোতাশ্রম নির্মাণ, সামরিক ও বেসামরিক বিমান রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ নির্মাণ, সার ও সৌরবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। এসব বিনিয়োগ চুড়ান্ত করতে রমজানের পর বাংলাদেশে আসছেন দেশটির
বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহ। তার সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো, জ্বালানি খাতের অ্যাকুয়া পাওয়ারসহ ২২টি বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশে আসবেন।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানের চুক্তি হয়। তার অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক সংলাপ। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সৌদি বিনিয়োগের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত আসে, এখন থেকে দুবছর পরপর একবার ঢাকায় এবং একবার রিয়াদে এ আলোচনা হবে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিনিয়োগের ব্যাপারে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ হবে সৌদি বিনিয়োগের নতুন গন্তব্য। তার অংশ হিসাবে ২২ জায়ান্ট কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়ে রমজানের পর বাংলাদেশ সফরে আসছেন সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী। তারা বাংলাদেশে আনুমানিক ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগের পরিমাণ এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার ওপর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে সৌদি আরব সফরকালে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের এ দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসছেন। তারা অবকাঠামো, জাহাজ নির্মাণ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরামকো, অ্যাকুয়া পাওয়ারের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, যা বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ চান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সৌদি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সৌদি আরবের বিপুল বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তির একটি প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। কূটনৈতিক, মানবিক, বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক বিস্তৃত হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন আর জনশক্তি, হজ, সাহায্য প্রভৃতি খাতে সীমিত নেই। সম্পর্ক এখন বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি খাতে বিস্তৃত হয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।