কী কারণে ইমরানের পতন

0
87

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতির মাঠে অধিনায়কত্ব করা ইমরান খানের পতনের পেছনে মূল কারণ আসলে কী? এ নিয়ে বিশ্লেষণী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। এখানে তুলে ধরা হলো সেই প্রতিবেদনের নির্বাচিত অংশ।

২০১৮ সালে ইমরান পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সে সময় প্রায় সবকিছুই তার পক্ষে ছিল বলে মনে হয়েছিল। বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার হিসেবে ইমরান তার দেশে জাতীয় নায়ক বনে যান। পরে তিনি নিজেকে একজন ‘ক্যারিশমাটিক’ রাজনীতিবিদে রূপান্তরিত করেন। রাজনৈতিক সাফল্য পেতে বছরের পর বছর ধরে ইমরান লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি সফল হন। পাকিস্তানে কয়েক দশক ধরে আধিপত্য বিস্তারকারী দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হন।

ইমরানের দল পিটিআই পাকিস্তানে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে পিটিআইয়ের সমাবেশগুলো জনতায় পরিপূর্ণ থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যমে তার সরব উপস্থিতি। এসবের মাধ্যমে তিনি তার দৃঢ় দুর্নীতিবিরোধী বার্তার বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হন।

ইমরান অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি তার দেশে পরিবর্তন আনবেন। একটি নতুন পাকিস্তান গড়বেন। পাকিস্তানে কোনো প্রধানমন্ত্রীই কখনো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তবে ইমরানকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি সম্ভবত তা পারবেন।

যেসব কারণে ইমরানের অবস্থান সুরক্ষিত মনে হয়েছিল, সেই একই কারণ তার পতন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ইমরান ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে কথিত আছে। তবে উভয়পক্ষই এ কথা অস্বীকার করে। এখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সেই সম্পর্ক চুকে গেছে বলে প্রতীয়মান হয়। নিঃসন্দেহে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরানের উল্লেখযোগ্য ও বাস্তবিক জনসমর্থন ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর দিকে থেকেও নির্বাচনে তার প্রতি গোপন সমর্থন ছিল।

ইমরানের শাসনামলে দেশটির সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাই সমালোচকরা ইমরানের সরকারকে একটি ‘শংকর শাসনামল’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করে ইমরানের দলত্যাগী এক সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘তিনি (ইমরান) তাদের (সেনাবাহিনী) দ্বারাই তৈরি। তারাই তাকে ক্ষমতায় এনেছিল।’ইমরানের প্রধান প্রতিপক্ষ নওয়াজ শরিফ। তাকে প্রথমে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। পরে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অনেকের সন্দেহ, নওয়াজ অতীতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে নওয়াজের শাস্তির আসল কারণ ছিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার বিরোধ। ক্ষমতায় আসার পর ইমরান গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তিনি ও সেনাবাহিনী একই মতাদর্শের অধিকারী।

ইমরানের এমন ঘোষণা নাগরিক সমাজের কর্মীদের উদ্বিগ্ন করে। ইমরানের শাসনামলে তার সরকার ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই- উভয়ের সমালোচনাকারী সাংবাদিক-ভাষ্যকাররা হামলা-অপহরণের শিকার হন। ইমরানের সরকার ও সেনাবাহিনী উভয়ে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। কিন্তু কোনো অপরাধীকে কখনই শনাক্ত করেনি ইমরান সরকার।

ইমরানের সরকার পাকিস্তানে সুশাসনের উন্নতির বিষয়ে জোর দিয়েছিল। সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থার স¤প্রসারণে দারুণ কিছু কাজ করেছেন ইমরান। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের একটা বড় অংশে স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প চালুর কথা বলা যায়। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ইমরান হোঁচট খান। যেমন দেশটির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য রাজনৈতিক নবাগতকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার এ সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে সমালোচনা ও উপহাস কুড়ায়।

ইমরানের আরও অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। তার শাসনামলে পাকিস্তানে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়েছে। ডলারের বিপরীতে পতন ঘটেছে পাকিস্তানি রুপি।

ইমরানের সমর্থকরা এ পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক অবস্থাকে দায়ী করেন। কিন্তু এ কথা সত্য, পাকিস্তানে ইমরানের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়ছিল।

এক সময় ইমরানের বিরোধীরা সেনাবাহিনীর বিরোধিতায় ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। তারা এমনকি সেনাবাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের নাম ধরে ধরে বলতেন, কে কে ইমরানকে ক্ষমতায় এনেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here