তাদের মৃত্যুর দায় কে নেবে

0
78

মুরাদ হোসেন লিটন : দুই দিনের অরাজকতা আর দুজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সংঘাত শেষে আবার বেচাকেনা শুরু হয়েছে রাজধানীর নিউমার্কেটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মার্কেট খুললেও চারদিকে ছিল নিস্তব্ধতা ও আতঙ্কের ছাপ। অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারানো কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মুরসালিনের পরিবারে যেন আঁধার নেমে এসেছে। তাদের এই মৃত্যুর দায় কে নেবে, এটাই এখন বড় প্রশ্ন। মুরসালিনের স্ত্রী দুই শিশুসন্তান নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় দুচোখে অন্ধকার দেখছেন। স্থানীয়রা বলছেন, দুদিনের সংঘর্ষে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা হয়তো তারা একটা সময় পুুষিয়ে নিতে পারবেন।

কিন্তু যে দুুটি প্রাণ ঝরে গেল, তার ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে তাদের পরিবার-স্বজন। নিউমার্কেটে দোকানদার ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মঙ্গলবার কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ হোসেনের মৃত্যু হয়। আর গতকাল বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে চলে গেছেন দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন। মুরসালিনের পরিবার মামলা করেনি। নাহিদের বাবা-মায়ের মতো মুরসালিনের স্বজনরাও আক্ষেপ করে বলেছেন, তারা বিচার চান না। বিচার চেয়ে কী হবে? কার কাছে বিচার চাইবেন?

সম্প্রতি মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকা-ের সময় গুলিতে নিহত হয় কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি। তার বাবাও আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বিচার চাই না। শুধু মেয়ের লাশটা চাই।’ সুশীল সমাজের ধারণা, স্বজনদের মনে এই ধারণা জন্মেছে যে, বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই কিংবা তারা ন্যায়বিচার পাবেন না।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় যারা মারা যান, তাদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত। তাদের মারা যাওয়ার ঘটনাটি তদন্তে সেই অর্থে গুরুত্ব পায় না। শুধু বড় ঘটনাটি ফোকাস হয়। ফলে বিচার পাওয়ার নজির কম। পেলেও দীর্ঘ সময় লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিচারব্যবস্থার প্রতি স্বজনদের অনাস্থাই অবশ্য একমাত্র কারণ নয়। এটার আরেকটা কারণ হলো, হত্যার পেছনে যারা আছেন, তারা এতটাই শক্তিশালী যে, এই মামলা করার কারণে তার পরিবারের ওপর যদি অদূর ভবিষ্যতে নিপীড়ন নেমে আসে, তখন কেউ পাশে থাকবে না। পরিবারের একজন মারা গেলেও অন্যরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেই ভেবে এ ধরনের পরিবার মামলা করতে চায় না।’ তবে নিহতের স্বজনরা বিচার না চাওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রের ওপর চপেটাঘাত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনাটি বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। দোকানপাট খুলেছে। শুধু স্তব্ধ হয়ে আছেন নিহতের স্বজনরা। নাহিদের পর সংঘর্ষে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যায়। কোন পক্ষের হামলায় মুরসালিনের প্রাণ গেল, সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।

পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেনশাহ মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, কাদের হামলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে, এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেক লোকজন ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করছে পুলিশ। হত্যাকারীদের শনাক্তে কাজ চলছে।

নিহত মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ বৃহস্পতিবার ঢামেক মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের লাশের অপেক্ষা করছিলেন। চোখ দিয়ে ঝরঝর পানি পড়ছিল তার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশে গরিবের কোনো বিচার নেই। কে করবে বিচার? আমরা কার নামে মামলা করব। ভাইকে কেন মেরে ফেলা হলো। কীভাবে মারা গেল, কিছুই জানলাম না।’ নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘তাদের বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। মুরসালিন বিয়ে করেছিলেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে।’

দুপুরে মুরসালিনের লাশ কামরাঙ্গীরচরের বাসায় নিয়ে গেলে স্বজনদের কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিহতের স্ত্রী অর্নি আক্তার মিতু বারবার বলছিলেন, ‘আমার স্বামীর কী দোষ ছিল? কেন ওকে এভাবে হত্যা করা হলো। দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমি এখন কই যামু। কে আমাদের ভরণপোষণ করবে।’

মুরসালিনের দোকান মালিক টুটুল জানান, ‘প্রায় তিন বছর ধরে ৯ হাজার টাকা বেতনে তার দোকানে চাকরি করে আসছিল মুরসালিন। সে অত্যন্ত ভদ্র ছিল।’

এর আগে নাহিদের মা নার্গিস বলেন, ‘আমরা বিচার চাই না। নাহিদকে তো ফেরত পাব না। বিচার চেয়ে কী হবে? বিচার চাইলেই তো আর বিচার পাব না। আমার ঘর-সংসার কীভাবে চলবে?’

ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘…সন্তান হারানো এই দুই পিতা যে দেশের শাসনব্যবস্থা, সরকার আর বিচার বিভাগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, সেটা কি বুঝতে পারছি? যে শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেখানে প্রতিষ্ঠানের চেয়েও ব্যক্তি বড় হয়ে উঠেছে। ভিক্টিম যারা, তারাই এখন ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। ভয়ের সংস্কৃতি আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।’

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘মৃত্যুর দায় তো কেউ নিচ্ছে না। আমরা যেটা পারি, নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করার। দোকানপাট খুলছে, আমরা চেষ্টা করবো পরিবারগুলোকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়।’

দুই দিনের অরাজকতা আর দুজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সংঘাত শেষে আবার বেচাকেনা শুরু হয়েছে রাজধানীর নিউমার্কেটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মার্কেট খুললেও চারদিকে ছিল নিস্তব্ধতা ও আতঙ্কের ছাপ। অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারানো কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মুরসালিনের পরিবারে যেন আঁধার নেমে এসেছে। তাদের এই মৃত্যুর দায় কে নেবে, এটাই এখন বড় প্রশ্ন। মুরসালিনের স্ত্রী দুই শিশুসন্তান নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় দুচোখে অন্ধকার দেখছেন। স্থানীয়রা বলছেন, দুদিনের সংঘর্ষে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা হয়তো তারা একটা সময় পুুষিয়ে নিতে পারবেন।

কিন্তু যে দুুটি প্রাণ ঝরে গেল, তার ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে তাদের পরিবার-স্বজন। নিউমার্কেটে দোকানদার ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মঙ্গলবার কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ হোসেনের মৃত্যু হয়। আর গতকাল বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে চলে গেছেন দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন। মুরসালিনের পরিবার মামলা করেনি। নাহিদের বাবা-মায়ের মতো মুরসালিনের স্বজনরাও আক্ষেপ করে বলেছেন, তারা বিচার চান না। বিচার চেয়ে কী হবে? কার কাছে বিচার চাইবেন?

সম্প্রতি মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকা-ের সময় গুলিতে নিহত হয় কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি। তার বাবাও আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বিচার চাই না। শুধু মেয়ের লাশটা চাই।’ সুশীল সমাজের ধারণা, স্বজনদের মনে এই ধারণা জন্মেছে যে, বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই কিংবা তারা ন্যায়বিচার পাবেন না।

সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় যারা মারা যান, তাদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত। তাদের মারা যাওয়ার ঘটনাটি তদন্তে সেই অর্থে গুরুত্ব পায় না। শুধু বড় ঘটনাটি ফোকাস হয়। ফলে বিচার পাওয়ার নজির কম। পেলেও দীর্ঘ সময় লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিচারব্যবস্থার প্রতি স্বজনদের অনাস্থাই অবশ্য একমাত্র কারণ নয়। এটার আরেকটা কারণ হলো, হত্যার পেছনে যারা আছেন, তারা এতটাই শক্তিশালী যে, এই মামলা করার কারণে তার পরিবারের ওপর যদি অদূর ভবিষ্যতে নিপীড়ন নেমে আসে, তখন কেউ পাশে থাকবে না। পরিবারের একজন মারা গেলেও অন্যরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেই ভেবে এ ধরনের পরিবার মামলা করতে চায় না।’ তবে নিহতের স্বজনরা বিচার না চাওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রের ওপর চপেটাঘাত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনাটি বৈঠকে সমঝোতা হয়েছে। দোকানপাট খুলেছে। শুধু স্তব্ধ হয়ে আছেন নিহতের স্বজনরা। নাহিদের পর সংঘর্ষে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যায়। কোন পক্ষের হামলায় মুরসালিনের প্রাণ গেল, সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।

পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেনশাহ মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, কাদের হামলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে, এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেক লোকজন ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যও সংগ্রহ করছে পুলিশ। হত্যাকারীদের শনাক্তে কাজ চলছে।

নিহত মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ বৃহস্পতিবার ঢামেক মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের লাশের অপেক্ষা করছিলেন। চোখ দিয়ে ঝরঝর পানি পড়ছিল তার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশে গরিবের কোনো বিচার নেই। কে করবে বিচার? আমরা কার নামে মামলা করব। ভাইকে কেন মেরে ফেলা হলো। কীভাবে মারা গেল, কিছুই জানলাম না।’ নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘তাদের বাবা বেঁচে নেই, মা আছেন। মুরসালিন বিয়ে করেছিলেন। তার দুটি সন্তান রয়েছে।’

দুপুরে মুরসালিনের লাশ কামরাঙ্গীরচরের বাসায় নিয়ে গেলে স্বজনদের কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিহতের স্ত্রী অর্নি আক্তার মিতু বারবার বলছিলেন, ‘আমার স্বামীর কী দোষ ছিল? কেন ওকে এভাবে হত্যা করা হলো। দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমি এখন কই যামু। কে আমাদের ভরণপোষণ করবে।’

মুরসালিনের দোকান মালিক টুটুল জানান, ‘প্রায় তিন বছর ধরে ৯ হাজার টাকা বেতনে তার দোকানে চাকরি করে আসছিল মুরসালিন। সে অত্যন্ত ভদ্র ছিল।’

এর আগে নাহিদের মা নার্গিস বলেন, ‘আমরা বিচার চাই না। নাহিদকে তো ফেরত পাব না। বিচার চেয়ে কী হবে? বিচার চাইলেই তো আর বিচার পাব না। আমার ঘর-সংসার কীভাবে চলবে?’

ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘…সন্তান হারানো এই দুই পিতা যে দেশের শাসনব্যবস্থা, সরকার আর বিচার বিভাগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, সেটা কি বুঝতে পারছি? যে শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেখানে প্রতিষ্ঠানের চেয়েও ব্যক্তি বড় হয়ে উঠেছে। ভিক্টিম যারা, তারাই এখন ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। ভয়ের সংস্কৃতি আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।’

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘মৃত্যুর দায় তো কেউ নিচ্ছে না। আমরা যেটা পারি, নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করার। দোকানপাট খুলছে, আমরা চেষ্টা করবো পরিবারগুলোকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here