স্বল্পআয়ের মানুষের ভিড় ফুটপাতে

0
75

পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদের কেনাকাটা। বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান ও শপিং মলগুলো ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে। তবে ফুটপাতের দোকানগুলোতেই ক্রেতা সমাগম সবচেয়ে বেশি। করোনায় আয় কমে যাওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় করছেন সেখানে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার নেই কোনো বিধিনিষেধ। তাই মার্কেট পাড়াগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। মানুষের এ ভিড় আর জমজমাট উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে দুই বছর পর আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে উৎসবের বাণিজ্য।

যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তার দক্ষিণে শহীদ ফারুক সড়কে ইদ্রিস সুপার মার্কেট, তাজ সুপার মার্কেট, রহমান প্লাজা, সামিউল্লাহ প্লাজা মোবাইল মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট রয়েছে। মার্কেটগুলো ঘিরে গোটা এলাকার ফুটপাতগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট দোকান। গত কয়েক দিনে এখানকার ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা ও বিক্রি দুটিই বেড়েছে বলে জানান বাচ্চাদের জামা বিক্রেতা জুয়েল আহাম্মেদ। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,

ঈদে বরাবরই বাচ্চাদের জামার চাহিদা বেশি থাকে। মা-বাবা নিজের জন্য না কিনেও সন্তানদের নতুন জামা কিনে দেন। তাই এ সময় ব্যবসা ভালো যায়। কিন্তু গত দুই বছর স্বাভাবিকের ১০ ভাগ ব্যবসাও হয়নি। এ বছর ব্যবসা অনেক ভালো যাচ্ছে। গেঞ্জি সেট ও ফ্রক বিক্রি বেশি। প্রথম দফায় যা কিনেছিলাম তা বিক্রি প্রায় শেষ। নতুন করে পাইকারিতে অর্ডার দিয়েছি।

বিক্রি বাড়ায় খুশি এখানকার জিনস প্যান্টের বিক্রেতা সোহেল আলীও। ইদ্রিস সুপার মার্কেটের সামনে ফুটপাতের এ বিক্রেতা জানান, এবার বাজারে নতুন এসেছে ‘কাঁচা বাদাম’ ও ‘পুষ্পা’ প্যান্ট। ছোটরাও পছন্দ করছে ডিজাইনগুলো। এগুলোর বিক্রিই সবচেয়ে বেশি। ঈদের আগে ব্যবসা এমনটা চললে লাভের মুখ দেখা যাবে এবার।

ছোট দুই ভাই ও নিজের জন্য জিনসের প্যান্ট কিনতে আসা তরুণ দেলোয়ার হোসেন জানান, কাজলার একটি ছোট কারখানায় চাকরি করে সামান্য যা আয় হয় তা দিয়ে মার্কেটের দামি পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। তাই ফুটপাতের তুলনামূলক কম দামের দোকানই তার ভরসা। দেলোয়ার বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাব। তাই ভাই দুইটার জন্য আর আমার জন্য একটা নতুন ডিজাইনের জিনস কিনে রাখছি। পরে আর সময় পাব না।

১৫ রোজার পর থেকে মালিবাগ ও মৌচাক মার্কেট এলাকার বিপণিবিতনগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তবে মার্কেটের তুলনায় ফুটপাতের ছোট দোকানগুলোতেই বেশি ভিড়। গেঞ্জি, শার্ট, জিনস, থ্রি-পিস কিংবা বাচ্চাদের পোশাক কেনাবেচা চলছে বেশি। এখানকার ফুটপাতে ওড়না বিক্রেতা আলো মিয়া বলেন, করোনায় টানা লোকসানের কবলে পড়ে গত বছর ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলাম। এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ঋণ করে আবার বিনিয়োগ করেছি। এবার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। ওড়না কিনতে আসা তাশফিয়া জামান বলেন, মার্কেটে পোশাকের অনেক দাম। আমার পক্ষে এত টাকার ড্রেস কেনা সম্ভব নয়। তাই এক পোশাকের দাম দিয়ে তিনটা ওয়ান পিস কিনেছি। সেগুলোর সঙ্গে ম্যাচিং করে ওড়না কিনছি। ফুটপাতের ওড়নাগুলোর মান ততটা খারাপ নয়। দামও কম।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এবার ঈদে রাজধানীর ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, করোনাকালে অর্ধকোটিরও বেশি অতিক্ষুদ্র ও অনু ব্যবসায়ীরা ব্যবসা হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা আয়শূন্য হয়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে এবার ঈদের বাজার আশার আলো দেখাচ্ছে তাদের। রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মানুষ কেনাকাটা করছেন। আয় কমে যাওয়ায় মধ্যবিত্তরাও ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন। এতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে, বিক্রিও বাড়ছে।

গত কয়েক দিন গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনে, ফুলবাড়িয়া মার্কেট ও হলের সামনের ফুটপাতের দোকানগুলোতে সকাল থেকেই নামছে মানুষের ঢল। কেউ গ্রামে থাকা পরিবারের জন্য, কেউবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করছেন। গুলিস্তানের রাজধানী হোটেলের সামনের ফুটপাতে বসা গেঞ্জি ও প্যান্ট বিক্রেতা শহীদুল্লাহ বলেন, এবার ঈদ মৌসুমে বেচা-বিক্রি অনেক ভালো। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বিক্রি ভালো থাকায় লাভ কম রেখেও পণ্য ছেড়ে দিচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here