ফেনী পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা

0
148

দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভোলায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্যাসকূপের সন্ধান মিলেছে। কিন্তু পাইপলাইন সুবিধা না থাকার কারণে ভোলা থেকে উত্তোলিত গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনা যাচ্ছে না। অথচ জাতীয় গ্রিডে ভোলার গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে এখন সংকট অনেকটা কম হতো। তাই ভোলায় পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ফেনী পর্যন্ত আনতে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চলাচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বলানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভোলায় যে গ্যাস পাওয়া গেছে তা পাইপলাইন না থাকার কারণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ফেনী পর্যন্ত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভোলায় আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। একটি পাইপলাইন নির্মাণ করতে পারলে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের মাধ্যমে কাজে লাগানো যাবে।’

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক নির্দেশনায় বলেছিলেন, ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও গ্যাস সরবরাহের দরকার নেই। এ ছাড়া ভোলায় যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, সেগুলো যাতে দ্বৈত জ্বালানির হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল, ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে।

জ্বালানি বিভাগসূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ দুই ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে ব্যবহার করতে। যার মধ্যে একটি হলো- এলএনজিতে (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) রূপান্তরিত করে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা এবং আরেকটি হলো নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন নির্মাণ। তবে এখন গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তর করে সেটি সরবরাহের যে উদ্যোগ ছিল, সেখান থেকে সরে এসেছে জ্বালানি বিভাগ। এখন পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগই প্রাধান্য পাচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ভোলা থেকে নিকটবর্তী জেলাগুলোয় পাইপলাইন নির্মাণের জন্য সমুদ্র বা নদী ক্রসিং কার্যক্রমসংক্রান্ত কারিগরি ও আর্থিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। গত বছরের ১৯ অক্টোবর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভোলার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনতে এলএনজি বা পাইপলাইন নির্মাণসংক্রান্ত পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস, আইআইএফসির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং জার্মানিকে নিয়োগ করে শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড থেকে ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড হয়ে ফেনী আইসিএস পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার।

জ্বালানি বিভাগের অন্য এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, পাইপলাইন অথবা এলএনজিতে রূপান্তর করে কী প্রক্রিয়ায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে নানা ধরনের সম্ভাবতা যাচাই শেষ। এখন পাইপলাইন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ গ্যাসকে এলএনজি রূপান্তর করে আনা বেশ ব্যয়বহুল। বিশ^বাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে এলএনজি আমদানি নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে দেশে আবিষ্কৃত গ্যাস অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকুক, সেটি আমরা চাই না।

তবে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশাল নদী পেরিয়ে পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা কঠিন ও ব্যয়বহুল হলেও তার উপায় খুঁজছে কর্তৃপক্ষ। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, ভোলায় প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট বা টিসিএফ গ্যাস আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) কর্মকর্তাদের মতে, ভোলা গ্যাসের ওপর ভাসছে। এখানে ইতিপূর্বে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও অন্তত দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলায় বর্তমানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে ছয়টি কূপ খনন করা হয়েছে। তাতে গ্যাসের মজুদ রয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আবিষ্কার হওয়া গ্যাসক্ষেত্রগুলো হলো শাহবাজপুর ইস্ট-১ ও ভোলা নর্থ-১।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here