নতুন সরকার গঠন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রনিল

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণবিক্ষোভের মধ্যে নতুন সরকার গঠন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন শ্রীলংকার নয়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। অর্থনীতির এ করুণ দশার মধ্যে কাকে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেবেন তা নিয়ে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নিজের প্রথম কার্যদিবসে বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রনিল বলেছেন, বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে তার কিছু পরিকল্পনা আছে। সেসব বাস্তবায়ন করা গেলে দেশ বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে বিশ্বাস তার। এ দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত ও তার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

কিন্তু রনিল যতই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথা বলুন নতুন সরকার গঠন যে তার পক্ষে সহজ হবে না তার ধারণা পাওয়া যায় কলম্বো গেজেট, ডেইলি মিরর, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। তারা বলছে, রনিল হচ্ছেন লঙ্কান পার্লামেন্টে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির একমাত্র আইনপ্রণেতা। দেশটির বর্তমান পার্লামেন্টে ২২৫টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে ১০০টি রয়েছে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বাধীন দলের নিয়ন্ত্রণে। বিরোধীদের রয়েছে ৫৮টি আসন। বাকি আসনগুলো স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের। ফলে সরকার গঠনে বিরোধীদের ওপর নির্ভর করতে হবে রনিলকে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন করতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথমেই হোঁচট খেয়েছেন। কারণ বিরোধী দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা এ সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন।

এদিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেও লংকান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে এখনো বিক্ষোভ চলছে। গতকালও রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করছেন। এরা আগে রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে সেখানে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা সাফ বলে দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। যতদিন তিনি পদ না ছাড়ছেন ততদিন বিক্ষোভ চলবে। একই সঙ্গে তারা নতুন সরকারের সামনে ৮ দফা দাবিও উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বাধ্যতামূলক পদত্যাগের বিষয়টি। এমনকি পদত্যাগের পরও দেশের সরকার পরিচালনায় তিনি ও সাবেক সরকারের সদস্যরা কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না।

বিক্ষোভকারীদের দ্বিতীয় দাবি হলো- প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর শ্রীলংকা একটি অস্থায়ী সরকারের অধীনে থাকবে, যাতে করে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সামাল দেওয়া যায়। তবে সেই সরকারকে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তৃতীয়ত সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় পরিবর্তন বিশেষ করে বাতিল করতে হবে ২০তম সংশোধনী। এ সংশোধনীতেই প্রেসিডেন্টকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। চতুর্থ দাবি হলো, অর্ন্তর্বতী সরকারকে অবশ্যই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চলমান সংকটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি যত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট রয়েছে তা সমাধানে নিতে হবে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ। ষষ্ঠ দাবি হলো, নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে বাধ্যতামূলক তাদের সম্পদের হিসেব দিতে হবে। সরকারের তরফ থেকেও নিরপেক্ষভাবে সেই হিসাব দেখতে হবে তদন্ত করে। কেউ যদি অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে থাকে তা হলে তা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি তহবিলে রাখতে হবে।

সপ্তম দাবি হলো, সারা দেশে এমনভাবে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে যাতে, সব নাগরিক ও পর্যটকদের অধিকার গুরুত্ব পাবে। সবশেষে একটি স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অর্ন্তবতী সরকার ভেঙ্গে দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির হাতে হস্তান্তর করতে হবে ক্ষমতা।

চামিরা দেদুওয়াগি নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, গত ৩৬ দিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমরা পার্লামেন্টের কাছে কিছু দাবি উপস্থাপন করছি। এ আন্দোলন শুধু প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিরুদ্ধে নয়, আমাদের লক্ষ্য দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। অধিকার কর্মী মানুরি পাবাসারি বলেন, কলম্বোর সাগরতীরে গল ফেস গ্রিনে আন্দোলনকারীরা যে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তা আমাদের জন্য প্রতীকী মুহূর্ত। এটি শ্রীলংকাকে বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পেরেছে। অনেকেই বলছেন, এ আন্দোলনের প্রভাব নাকি রাজধানী কলোম্বোর বাইরে নেই। এ আন্দোলন নাকি দেশের সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু বিষয়টি সত্যি নয়। আমরা আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রায় সুশীল সমাজের অন্যান্য ৬০টি সংস্থার সঙ্গে প্রায় আটটি বৈঠকের পর এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষের সঙ্গে বিতর্ক ও আলোচনার পর আমরা জনকেন্দ্রিক দাবিগুলো তালিকাভুক্ত করেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here