পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে দুই পাড়ে সাজ সাজ রব। মানুষের মধ্যে খুশির ঝিলিক। লাল-সবুজের সামর্থ্যরে খুশি ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। উদ্বোধনের দিন যত এগিয়ে আসছে, মানুষের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন বক্তব্যে অজানা শঙ্কায়ও ভর করছে। তবে উৎসবমুখর মানুষকে আশ্বস্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন কোনো শঙ্কা-আতঙ্ক নেই। উদ্বোধনের দিন পদ্মার দুই পারসহ সারাদেশে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু দুই পারে ৫ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইউনিফর্মে মোতায়েন থাকবেন। সাদা পোশাকে তৎপর থাকবেন গোয়েন্দারা।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান আমাদের সময়কে বলেন, ঝুঁকি বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তায় ডগ স্কোয়াড, এপিবিএন, র‌্যাব, স্পেশাল ব্যাঞ্চের সদস্যরা থাকবেন। উৎসব ঘিরে বিপুলসংখ্যক যান চলাচল করবে। ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও বড় চ্যালেঞ্জ। শরীয়তপুর প্রান্তে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলেছে, সারাদেশে ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে। এজন্য সারাদেশে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। সারাদেশে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সদর দপ্তর থেকে মিটিংও করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে অনলাইনে গুজব প্রতিরোধের বিষয়ে নিয়মিত সাইবার পেট্রোলিং করা হচ্ছে। অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকটিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, পদ্মার দুই পাড়ে সংশ্লিষ্ট দুই জেলার বাইরে থেকেও ফোর্স নিয়ে আসা হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে। নদীতে নৌপুলিশ নিরাপত্তা দেবে। সঙ্গে কোস্টগার্ডও থাকবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাদের নিরাপত্তায় নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন সকাল থেকেই পদ্মার মাওয়া ঘাট থেকে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে যারা ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যারা যাবেন, তাদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করতে হবে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেছেন, সেতুর উদ্বোধন ঘিরে দেশের বাইরে থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। তাদের ওপর মনিটরিং করা হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ফোর্স মোতায়েন করা হবে।

গতকাল সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়। সরকারবিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা সেতুর ক্ষতিসাধনসহ সরকারকে বিব্রত করতে গুজব ও অপপ্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে ব্যবস্থা নিতে সভায় নির্দেশ দেওয়া হয়।

শরীয়তপুরের এসপি আশরাফুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা করছি না।

এদিকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজং প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানা এবং শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা নামে দুটি থানা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর পাশাপাশি দুই পাড়ের মানুষের নিরাপত্তা দেবে থানা দুটি। একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন প্রতিটি থানায়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন দুই থানার পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় যোগ দেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here