Home ফিচার উদঘাটন হয়নি শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য

উদঘাটন হয়নি শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য

0

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার বগারটেক এলাকায় প্রাইভেটকার থেকে শিক্ষক দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধারের এক দিন পরও উদঘাটন হয়নি রহস্য। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলাও হয়নি। একটি সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলের উদ্ধার হওয়া সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িটি এঁকেবেঁকে কিছুক্ষণ চলার পর রাস্তার পাশে এসে থমকে যায়। সে সময় কিছু যানবাহনের জটলাও লেগে যায় ওই রাস্তায়।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। গাজীপুরের হায়দারাবাদ ব্রিজ পার হতেই একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণহীন চলতে থাকে। এঁকেবেঁকে কিছুক্ষণ চলার পর এমএম পেন্টিং কারখানার সামনের সড়কের বাম পাশে থেমে যায়। এর ঠিক আগেই গাড়িটির ডান পাশের একটি দরজাও খুলে যায়। তবে অস্পষ্টতার কারণে গাড়ি থেকে কেউ নেমেছে কিনা বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানা গেছে।

ওই শিক্ষক দম্পতি যে প্রাইভেটকারে করে বাসায় ফিরছিলেন সেই গাড়ি থেকে পুলিশের অপরাধী তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) একটি খাবার বক্সসহ কিছু সামগ্রী আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশ ওই প্রাইভেটকারটিও জব্দ করেছে।

অন্যদিকে স্কুলশিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলির কর্মস্থলে এখন শুধুই শূন্যতা। অফিস কক্ষে পড়ে আছে তাদের ব্যবহৃত সব জিনিসপত্র। সহকর্মী শিক্ষকরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই স্কুল থেকে বের হওয়ার আগে অফিসের চাবি দিয়ে যান টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষক। সে সময় ওই গাড়িতে আরেক শিক্ষককে নিয়ে যেতেও দেখেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছেন না প্রিয় শিক্ষকদের এমন বিদায়।

নিহত প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ বলেন, রাতে গাজীপুরে নিহতের জানাজা শেষে ময়মনিসংহের ত্রিশালে গ্রামের বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়েছে। সবাই মানসিকভাবে বিপর্যন্ত তাই মামলা করতে বিলম্ব হচ্ছে। এ ছাড়া মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাওয়া বা কাউকে সন্দেহ করা যাচ্ছে না তাই আপাতত অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হবে। নিহত শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমানের ভাইদের মধ্যেই একজন মামলার বাদী হবেন।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাফি মোহাইমেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে মৃতদেহ দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এ চিহ্ন নতুন না পুরাতন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে। এ ছাড়া দুজনের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা খাবারে বিষক্রিয়া বা অন্য কারণেও হতে পারে। নিহতদের পাকস্থলীতে কোনো বিষক্রিয়া আছে কিনা তার কেমিক্যাল পরীক্ষাসহ শরীরের বিভিন্ন নমুনা ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী বলেন, নিহতদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। রাতেই গাজীপুরে তাদের জানাজা শেষ করে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছিল। এ ছাড়া তাদের মৃত্যুর কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে। তবে এরই মধ্যে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার মাকসুদের রহমান জানান, লাশ উদ্ধারের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছেন। ময়নাতদন্তে তাদের দেহের অভ্যন্তরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৭ আগস্ট) সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে স্কুলের উদ্দেশে বের হন ওই শিক্ষক দম্পতি। কারটি জিয়াউর রহমান নিজেই চালাতেন। স্কুল শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তারা। এরপর সন্ধ্যায় একবার স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলেও পরে তাদের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্বজনরা রাতভর খোঁজাখুঁজি করেন। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মহানগরের দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তাদের গাড়ির ভেতর চালকের আসনে প্রধান শিক্ষক ও পাশের আসন থেকে স্ত্রীর নিথর দেহ উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ সেখান থেকে মৃতদেহ থানায় নিয়ে আসে। নিহতরা হলেন- গাজীপুরের টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান (৫১) ও তার স্ত্রী মোসা. মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। তিনি টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here