Home অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার পরিবর্তন হচ্ছে

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হার পরিবর্তন হচ্ছে

0

মূল্যস্ফীতির ক্রমাগত উল্লম্ফনে অর্থনীতিতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে দেশের বড় তিনটি রপ্তানির বাজারে প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মকৌশল তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। এর অংশ হিসেবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলনের হারও বাড়ছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উল্লম্ফনের কারণে এর হার ৭ শতাংশের ওপর প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

আগামী ২২ ডিসেম্বর সরকারের ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রাবিনিময় হার সংক্রান্ত কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল’-এর সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানো এবং মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলনের হার বাড়ানোর প্রস্তাবটি উঠবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভা অর্থবছরের দুবার অনুষ্ঠিত হয়। একটি ডিসেম্বরে এবং অন্যটি এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আগামী সভায় কৃষিমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিকল্পনা সচিবরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), রপ্তানি, আমদানি, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও জিডিপি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক খাতে বেশ কয়েকটি ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর পাশাপাশি মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং রিজার্ভ কমে যাওয়াও সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। সূত্রমতে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।

সহসাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামছে না। এর প্রভাবে উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এর ফলে ইউরোপের ক্রেতারা পোশাক ক্রয় কমিয়ে দিতে পারে। এটি ঘটলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানি মারাত্মক ব্যাহত হবে। কারণ এসব দেশেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেশি রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া এলসি জটিলতার কারণে দেশে ব্যবসা পরিস্থিতি কিছু ঝিমিয়ে পড়েছে। আগামীতে রাজস্ব আদায় কতখানি বাড়বে তা নিয়ে সরকার চিন্তিত। বৈঠকে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিষয়ে একটি বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে।

অন্যদিকে দুই মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা হ্রাস পেলেও এখনো তা সরকারি হিসেবে ৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গেল নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এটি অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের মূল্যস্ফীতি সরকারি হিসাবের চেয়ে আরও বেশি এবং তা ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

শুধু মূল্যস্ফীতিই নয়, অক্টোবরে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতিও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের শেষে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি বাড়তে থাকার অর্থ হচ্ছে- বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here